বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন হলো সীতাকুণ্ডের জঙ্গি দম্পতির লাশ
চট্টগ্রাম অফিস : সীতাকুণ্ডের ছায়ানীড় ভবনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত জঙ্গি দম্পতি কামাল উদ্দিন এবং তার স্ত্রী জোবাইদা ইয়াসমিনের মরদেহ অবশেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঠাঁই হয়েছে আনজুমানে মফিদুল ইসলামে। স্বজনরা লাশ নিতে অস্বীকার করায় পুলিশ দুইজনের মরদেহ অবশেষে বেওয়ারিশ হিসেবে আনজুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছে। গতকাল রাতে তাদের দাফন করা হয়েছে।
এরআগে সোমবার দুইজনের স্বজনরা নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে কামাল উদ্দিন এবং তার স্ত্রী জোবাইদা ইয়াসমিনের লাশ শনাক্ত করলেও তারা লাশ না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।
যাওয়ার আগে চমেক হাসপাতালের মর্গে কামালের বাবা মোজাফফর আহমদ ও জোবাইদার বাবা নুরুল আলম সন্তানদের লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি কামাল ও জোবাইদার ৮ মাসের শিশু সন্তান ইমাম হোসেনের লাশও তারা গ্রহণ করেনি।
কামালের বাবা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘ছেলে যে এত বড় ঘটনা ঘটাবে তা কখনো কল্পনাও করিনি।’
সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর পুলিশ যোগাযোগ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষের মুখেও এরপর শুনেছি। আজ এখানে এসে দেখলাম। এ আমারই সন্তান। তার দিকে আমি ফিরেও চাইব না। আমি লাশ নেব না।’
তার সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা জোবাইদার বাবা নুরুল আলমও মর্গে আসেন। মর্গে এলেও মেয়ের লাশ দেখতে যাননি তিনি। ছেলে জিয়াবুল হক গিয়ে বোনের লাশ শনাক্ত করেন।
জোবাইদার আরেক ভাই জহিরুল হক জসিম ও তার স্ত্রী আরজিনাকে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের নামার বাজার এলাকার সাধন কুটির থেকে ১৫ মার্চ বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। জোবাইদার বাবা বলেন, ‘গত সাত-আট মাস ধরে জসিম আলাদা বাসায় থাকত। আমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ করত না। তবে কামাল ও জসিমের মধ্যে যোগাযোগ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা যে কাজটি করেছে, এটা মন থেকে ঘৃণা করি। তাই তাদের লাশ নেব না।’
এমনকি শিশুটির লাশও নেবেন না বলেও জানান তিনি।
এদিকে সীতাকুণ্ডের সাধন কুঠির এবং ছায়ানীড় ভবনের দুটি আস্তানা থেকে সোমবার পর্যন্ত পুলিশ মোট ৪২টি বোমা উদ্ধার করা করেছে এর মধ্যে পাঁচটি ছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। সবগুলো বোমা নগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল নিষ্ক্রিয় করেছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সোমবার ছায়ানীড় ভবনে তাদের কার্যক্রম শেষ করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, ছায়ানীড় বাড়িটির একটি কক্ষে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অভিযান বাকি ছিল। গতকাল ওই কক্ষে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে একটি বোমা ও ১১টি বিস্ফোরক জেল উদ্ধার করা হয়। বোমাটি ওই কক্ষের লেপতোশকের ভেতর ও জেলগুলো ঘরের এক কোনায় পাওয়া গেছে। তিনি জানান, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনটি নিরাপদ ঘোষণা করলেও এই মুহূর্তে সেটি হস্তান্তর করা হচ্ছে না। সেখানে পুলিশের অন্যান্য দল তদন্ত করবে। তাই সেটি এখনো সিলগালা করে রাখা হয়েছে। ছায়ানীড় ও সাধন কুঠির বাড়ি দুটিতে পুলিশের পাহারা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ বিকেলে পৌর সদরের পশ্চিম আমিরাবাদ এলাকার সাধন কুঠির থেকে শিশুসহ এক দম্পতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখান থেকে চারটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রেনেড ও একটি সুইসাইড বেল্ট উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। ওইদিন দুপুর থেকে আরেকটি জঙ্গি আস্তানা চৌধুরী পাড়া এলাকার ছায়ানীড় ভবনে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই ভবন থেকে গত তিনদিনে ছোট-বড় ৩৭টি বোমা উদ্ধার করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
জানাগেছে, গত রবিবার সকালে কামাল উদ্দিনের পিতা ও জোবাইদার পিতা ও ভাই লাশ নেয়ার জন্য সীতাকুণ্ড থানায় আসেন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নেয়ার জন্য সেদিন লাশ হস্তান্তরের অনুমতি দেয়নি। রাতভর তাদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল সকালে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের লাশ নেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু এর মধ্যে তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে লাশ না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানান, আমরা জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ছেলেমেয়ে জঙ্গি হওয়ার মত ঘৃণিত কাজের সাথে জড়িত থাকায় তারা মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই তারা তেমন কিছু তথ্য দিতে পারেনি। তবে তারা নিহতদের লাশ গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করায় লাশগুলো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দুইজনের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
(দ্য রিপোর্ট/এআরই/এনআই/মার্চ ২১, ২০১৭)