দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দুধের শিশু থেকে বিচ্ছিন্ন করে দুই মাকে ১৩ ঘণ্ট থানায় আটকে রাখার ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপপরিদর্শককে (এসআই) তলব করেছেন হাইকোর্ট। ওসি জিয়াউল মোরশেদ ও এসআই মো. মাহতাবকে আগামী ২৯ মার্চ স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, এই ঘটনার তদন্ত করে আগামী ৯ মে’র মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রতিবেদনও দিতে বলেছেন আদালত।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

এ ছাড়াও অমানবিকভাবে দুই মাকে ১৩ ঘন্টা আটকে রাখার ঘটনাকে কেন বেআইনী ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে তা জানতে রুলও জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, মাদারীপুর পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রানা কাওসার হাইকোর্টে সোমবার (২০ মার্চ) জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন।

আদালতে মঙ্গলবার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী পরিষদের সভানেত্রী ফাওয়াজিয়া করিম ফিরোজ, অ্যাডভোকেট শোভানা বানু ও নাজনীন আরা আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদেশের পর রিটকারী আইনজীবী রানা কাওসার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গত ১২ মার্চ, রবিবার, সকাল ১০টার দিকে বিরোধপূর্ণ একটি জমির তদন্ত কাজে যান মাদারীপুর সদর থানার এসআই মাহাতাব হোসেন। এ সময় তিনি লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বিরোধপূর্ণ জমির পাশের বাড়ির খালেক বেপারীর ছেলে পনির হোসেনের কাছে মামলা সংক্রান্ত বিষয় জানতে চান। পনির মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এতে এসআই মাহাতাব ক্ষীপ্ত হয়ে পনিরকে থাপ্পড় দেন। এক পর্যায়ে পনির পুলিশের সাথে বাক-বিতাণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে আরও বেশি ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন মাহাতাব। পরে ফোন করে সদর থানা থেকে তিন গাড়ি পুলিশ নিয়ে পনিরের বাড়িতে ব্যাপক তাণ্ডব চালান তিনি। এ সময় পনির ও তার বড় ভাই-বোনের ঘরে মূল্যবান আসবাবপত্র ও রান্নার চুলাও ভেঙে ফেলা হয়। এক পর্যায়ে পনিরের স্ত্রী ঝুনু বেগম ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী আকলিমা বেগমকে টেনে-হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝুনু বেগমের তিন মাসের শিশু ও আকলিমা বেগমের ১৮ মাসের শিশুকে কোল থেকে রেখে যেতে বাধ্য করে পুলিশ। এরপর রাত ১২টার দিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

এই আইনজীবী আরও বলেছেন, ‘একজন আইনী কর্মকর্তা হয়েও আইন বহির্ভুতভাবে দুধের বাচ্চাকে তার মার কাছ থেকে এভাবে দূরে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনী। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং সংবিধান পরিপন্থী। এ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আদালত ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন।’

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জেডটি/মার্চ ২১, ২০১৭)