পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ময়মনসিংহ জেলার গয়েশপুর মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির এতিম ছাত্রী (১১) অপহরণের ঘটনায় থানায় উৎকোচের বিনিময়ে মামলা নিলেও রহস্যজনক কারণে কোনো অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
এদিকে, অপহরণকারীদের প্রভাব আর হুমকিতে ওই ছাত্রী ও তার নানী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঘটনার পর ভিকটিমের খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য রাশেদাকে অভিযুক্তরা রামদা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলায় সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার পাইথল গ্রামের অধিবাসী এবং গয়েশপুর ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসায় যাতায়াতের সময় একই গ্রামের কালা মিয়ার বখাটে ছেলে কাওছার (২৩) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। গত ২৮ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় বখাটে কাওছার ও তার সঙ্গীরা ওই ছাত্রীকে সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মা-বাবাহীন অপহৃতার নানী ওইদিনই পাগলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পাগলা থানার এসআই জামালের নেতৃত্বে থানা পুলিশ তদন্তের জন্য একাধিকবার ঘটনাস্থল ও অভিযুক্তদের বাড়িতে যায়। কিন্তু তখন পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড না হওয়ায় অপহৃতার নানী উপায়ন্তর না দেখে স্থানীয় পাইথল ইউনিয়ন পরিষদের শরণাপন্ন হন।
৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোছাম্মাত রাশিদা খাতুন অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে অপহৃতাকে ফেরত দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত কাওছারের চাচা লালুকে বলেন। এ সময় অভিযুক্ত কাওছার ও তার চাচাতো ভাই রায়হানের নেতৃত্বে ৪-৫ জন সশস্ত্র যুবক নারী ইউপি সদস্যকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওযায় পর তাকে ঢাকার মহাখালী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অপহৃতার নানী মদিনা বেগম (৫০) অভিযোগ করে বলেন, ‘থানায় অভিযোগ দায়েরের পর কাওছারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার নিজ গ্রাম পাইথলে আয়ের একমাত্র উৎস মনিহারি দোকানে তালা লাগিয়ে বন্ধ করে দেয়। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওরা আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটায়। এ ছাড়া তারা আমার অপহৃতা নাতীর ৮ বছর বয়সী একমাত্র ছোট ভাইকেও অপহরণের হুমকি দেয়, যে কারণে আমি তাদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, মামলা রেকর্ড করার জন্য থানা পুলিশকে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়েছি। টাকা দিলেও প্রথমে মামলা নিতে নানা টালবাহানা করে পুলিশ। যদিও ঘটনার এক সপ্তাহ পর ৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রেকর্ড করে।
মামলায় আসামি করা হয় বখাটে কাওসার, তার পিতা কালা মিয়া, চাচা লালু কসাই, রানা ওরফে (বরিশাইল্যা রানা), জরিনা, নিলুফা ও শিউলীকে। তবে আসামিরা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
মামলার অভিযুক্তরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের একমাত্র ছোট ভাই কাজলের কাছের লোক বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোছাম্মাত রাশিদা খাতুনের ছেলে জাকির হোসেন জানান, ‘আমার মাকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় মামলা করার জন্য থানা পুলিশকে টাকা দেওয়ার পরও তারা মামলা রেকর্ড করেনি।’
স্থানীয় পাইথল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাদল বলেন, ‘মনে হয় মেয়েটি স্বেচ্ছায় ছেলের সঙ্গে গেছে। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিয়ে স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি আপস-মীমাংসার চেষ্টা করছি।’
পাগলা থানার ওসি কামাল হোসেন মামলা রেকর্ড (এফআইআর) করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি মীমাংসা করার চেষ্টা করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে আমিও উপস্থিত হয়েছিলাম।’ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে ওসি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দেওয়া জবানবন্দিতে অপহরণের কথা বলেনি অপহৃতা। স্বেচ্ছায় বিয়ে বসতে সে কাওসারের সঙ্গে পালিয়েছিল বলে রেকর্ড রয়েছে।
তবে অপহৃতা বলেছে, ‘আমাকে নিলুফা ও শিউলী শিখিয়েছিল আদালতে এভাবে বলতে। তাই আমি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ সব বলেছি।’
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এমএআর/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)