দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেদখল হওয়া তিব্বত হল উদ্ধার করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শিক্ষকসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩ জন ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে দুই শতাধিক।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসির আহমেদ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ। অন্যজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে সংঘর্ষে হল উদ্ধার আন্দোলনের সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম, একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক আলী নূর, ফজল, হিমেল, সোহেল, মিজান, রবিউল, তারেক, ইমরান হোসেন, রাকিব, পিজুয, মিলন, আসাদুজ্জামান, আব্দুর রহিম, জিয়া, রাকিব, দীপ, মিলন, সঞ্জিব বসাক, বিদুষ, সাদ্দাম, ফিরোজ, নাজমুল, রিয়াদ, সিরাজ, স্পন্দন, সাধন কুমার বিশ্বাস, প্রসেঞ্জিত কুমার, আনোয়ার, তোফাজ্জল হোসেন, মুরাদ, অমিত কুমার রায়সহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সুমনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

রবিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে মাসুদ বিল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত সাংবাদিক তাহের, সংগ্রাম, দুইজন ফটো সাংবাদিকসহ কমপক্ষে দশজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহবান করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে উপাচার্য দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হল উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলাপ আলোচনা চলছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল ৯টার দিকে হল উদ্ধারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ তিনটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে দশটার দিকে শিক্ষার্থীরা তিব্বত হল অভিমুখে যাত্রা করে। এ সময় পুরান ঢাকার বাংলাবাজার মোড়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয় তারা। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই তিব্বত হলের সামনে অবস্থান নেয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লালবাগ জোনের ডিসি হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকা।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গ্রেনেড, রাবার বুলেট, ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল ও পেপার স্প্রে নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ দ্বিতীয় দফা আক্রমণ করে শিক্ষার্থীদের উপর। এ সময় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও প্রবেশ করে পুলিশের রায়াট কার।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলা বন্ধ করতে অনুরোধ জানায়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অশোক কুমার সাহা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। লালবাগ জোনের ডিসি হারুনুর রশিদ পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এখন স্পটে আছি। পরে ফোন দিবেন।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হল উদ্ধার আন্দোলনের সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হল উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

জরুরি সভায় বসছে জবি শিক্ষকরা

হল উদ্ধারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হমলার ঘটনায় সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভার ডাক দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষক মিলনায়নতনে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী আককাস। তবে সভাটি কখন অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।

এদিকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সোমবার শিক্ষকরা আন্দোলনে নামবে-এ ধরণের একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতেই এ সভা ডাকা হয়েছে বলে একাধিক শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এলআরএস/এমসি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)