সরকার নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে : ফখরুল
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : ‘সরকার নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে’ উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সমঝোতা ও সংলাপের ব্যাপারে সরকার এখনো কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার যদি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার প্রশ্নে সংলাপ ও সমঝোতার পথ উন্মুক্ত না করে নিজস্ব পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যায়, তাহলে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের চূড়ান্ত সমাধান রাজপথেই করা হবে।’
নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার বিকালে ১৮ দলের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের শেষদিনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন স্বৈরাচারকে কীভাবে পরাজিত করতে হয় সেটিও আমাদের জানা আছে। দেশে চলছে প্রধানমন্ত্রী ও তার বিশ্বস্ত সহচরদের খাম-খেয়ালির ওপর নির্ভর করে। একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করা তাদের মহাপরিকল্পনার অংশ।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য সংসদে যে কমিটি করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ তার খসড়া প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার কথা বলে সুপারিশ করেছিল বলে উল্লেখ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন কমিটির সদস্যদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থাকে বলেছিল এটি সেটেলড ইস্যু, এটা পরিবর্তন করার দরকার নেই। এ ছাড়া আমির হোসেন আমু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম, রাশেদ খান মেনন ও বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকার রক্ষার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু আজ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলে মুখর। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড রাজনীতি কখনই জনকল্যাণের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমঝোতা না হলে রাজপথের আন্দোলনে যে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। তাতে একশভাগ দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে । বিরোধী দলের কোনো দায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি প্রহসনের নির্বাচনে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চূড়ান্ত কার্যকর করার জন্য অনেক আগে থেকেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আদালত, প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কব্জা করে তাদের মনের মতো করে সাজিয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বিএনএফ নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনকে নিবন্ধিত করার জন্য সরকারি চক্রান্তের ইনস্ট্রুমেন্টে পরিণত হয়েছে। এমনকি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই বিএনএফকে নাকি গমের শীষ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে নির্বাচন কশিশনকে চরম মাশুল দিতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকার নিজেদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিরোধীদলের চলমান কর্মসূচিকে নিষ্ঠুরভাবে মোকাবিলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাড়াবাড়ি বল প্রয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রক্তারক্তি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৫ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ২২ জন নিহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চার হাজার ৩৩৭ জনের বেশি নেতাকর্মীকে। আহত হয়েছে ১৩ হাজার ১২৩ জনেরও বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে এক লাখ আট হাজার একশয়ের অধিক নেতাকর্মীকে। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা পেয়েছে ৭৫ জন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, অর্থ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সহ-মহিলা সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।
(দিরিপোর্ট ২৪/এমএইচ/এসকে/এএস/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)