দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ চলছে। আস্তানায় থাকা জঙ্গিদের জীবিত ধরার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা। তাছাড়া ‘আতিয়া মহল’নামের পাঁচতলা বাড়িটিতে জঙ্গিরা বিস্ফোরক লাগিয়ে রেখেছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ‘আতিয়া মহলে’অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর একটি কমান্ডো ব্যাটালিয়ান। সেনাবাহিনীর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ওই বাড়িতে আটকে পড়া সাধারণ মানুষদের উদ্ধার করা। এ কাজটি সেনাবাহিনী সফলতার সঙ্গে করেছে। ওই বাড়ির ২৮টি ফ্ল্যাট থেকে ৭৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওই বাড়িটিতে সেনাবাহিনীর অভিযান এখনো চলছে। জঙ্গিরা ওই বাড়িটিতে বিস্ফোরক জড়ো করেছে। তারা সেখানে বিস্ফোরক লাগিয়েও রেখেছে। এ কারণে অভিযান শেষ হতে বেশি সময় লাগছে।’

পাঁচতলা ওই বাড়িটির ৩০টি ফ্ল্যাটে মোট ১৫০টি কক্ষ রয়েছে জানিয়ে আইএসপিআরের পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো কক্ষ ক্লিয়ার করতে সময় লাগবে। তাছাড়া আমাদের উদ্দেশ্য হলো জঙ্গিদের জীবিত ধরা। এ জন্য আমরা একাধিকবার তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছি। কিন্তু আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তারা ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তারা ‘আইইডি’ (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্লাস্ট করেছে। যার শব্দ বাইরে থেকে শুনা গেছে। এ ধরনের বিস্ফোরক খুবই বিপজ্জনক।’

অভিযান চলাকালে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে স্পটেই (ঘটনাস্থলেই) আছি। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’

জঙ্গিরা অবস্থান করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ‘জঙ্গি আস্তানা’বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত থেকে উস্তার আলীর মালিকাধীন ওই বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ। শুক্রবার (২৪ মার্চ) পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের বারবার আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হলেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি। পুলিশের কাছে নয়, বরং সোয়াট টিমের কাছে আত্মসমর্পণ করবে বলে জঙ্গিরা জানায়।

সোয়াটের একটি দল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পারিপার্শ্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে সোয়াট অভিযান পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চান বলে জানান আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান।

শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর ঘটনাস্থলে যায় এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা মূল্যায়ন করে। শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অপারেশনের প্রস্তুতি শুরু করে। তবে মূল অপারেশন শুরু হয় সকাল ৯টায়।

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে পুলিশ ও সোয়াট টিমের সদস্যরা সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন অভিযানটি তদারকি করছেন।

পুলিশের ধারণা, কাওসার আহমদ ও মর্জিনা পরিচয়ে এক দম্পতির ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটটিই সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আস্তানা। ভাড়া নেওয়ার সময় কাওসার নিজেকে ‘প্রাণ’কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছিল বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এপি/মার্চ ২৫, ২০১৭)