চবি ছাত্র খুনের নেপথ্যে পরকীয়া, প্রেমিকাসহ গ্রেফতার ৪
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার শহীদ নগর এলাকায় খুন হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের (চবি) বাংলা বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চৌধুরী আলাউল হত্যার জট খুলতে শুরু করেছে। হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর পুলিশ দাবি করছে তারা আলাউল হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে।
মূলত পরকীয়ার কারণেই আলাউলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রামের রাউজান ও ভোলার লালমোহনসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরকীয়া প্রেমের নায়িকা ইয়াসমিন আক্তার রুম্পাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর বুধবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টায় বায়োজিদ থানায় সাংবাদিকদের সামনে ইয়াসমিন আক্তার রুম্পা ও তার স্বামীসহ ৪ জনকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।
আটকরা হলেন-ইয়াসমিন আক্তার রুম্পা (২১), তার স্বামী মো. ইকবাল হোসেন (২৭) ও রুম্পার দুই সৎ দেবর মো. তৈয়ব ও মো. হেলাল। পালাতক রয়েছে অপর দেবর মাসুদ।
পুলিশ জানায় সোমবার (২৭ মার্চ) রাতে ইকবালকে রাউজানের হিঙ্গলায় তার খালার বাড়ি থেকে স্ত্রী রুম্পাসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলা জেলার লালমোহন থেকে তৈয়ব ও হেলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আজ (বুধবার) ভোরে ভোলা থেকে বায়েজিদ থানায় আনা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চৌধুরী আলাউল হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে। স্ত্রীর পরকীয়ার প্রেমিক আলাউলকে বাধা দিয়ে এ পথ থেকে ফেরাতে না পেরেই মূলত রুম্পাকে চাপে ফেলে হত্যার পরিকল্পনা নেয় ইকবাল। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা নেয় তিন সৎ ভাইয়ের।
পরিকল্পনা মোতাবেক ২২ মার্চ রুম্পাকে দিয়ে আলাউলকে ফোনে ডেকে এনে বায়োজিদ থানাধীন পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় ভাড়া নেয়া নতুন বাসা দেখনোর কথা বলে জনৈক সৈয়দুল আলমের বাসায় নিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে তারা পালিয়ে যায়।
প্রেসব্রিফিং এ বায়োজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, গ্রেফতারকৃত রুম্পা ও তার স্বামী হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশকে বলেছে পূর্ব প্রেমের সূত্র ধরে আলাউল প্রায় তাকে ফোনে বিরক্ত করতো। এবং কু-প্রস্তাব দিতো। দেখা করতে বলতো। এতে সে (রুম্পা) অতিষ্ঠ হয়ে উঠে এক পর্যায়ে স্বামী ইকবাল হোসেনকে এ কথা জানায়। ইকবাল এ পথ থেকে সরে যেতে আলাউলকে অনুরোধ করে। এতে কাজ না হলে সে একাধিকবার মোবাইলে আলাউলকে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে একমাস আগে স্ত্রীর প্রেমিকা আলাউলকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইকবাল তার সৎ ভাই হেলাল তৈয়ব ও মাসুদকে হাত করে। তাদের সাথে পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ২২ মার্চ বায়েজিদ থানার পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় প্রবাসী সৈয়দুল আলমের চারতলা ভবনের ৩ তলায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। এবং রুম্পাকে দিয়ে আলাউলকে ফোন করে সে বাসায় যেতে বলে। উক্ত বাসায় পূর্ব থেকে ইকবাল, হেলাল তৈয়ব ও মাসুদ লুকিয়ে ছিল।
রুম্পার ফোন পেয়ে ঘটনার দিন বিকালে আলাউল যখন ঐ বাসায় রুম্পার সাথে দেখা করতে যায়। তখনই বাসায় পূর্ব থেকে লুকিয়ে থাকা ইকবালসহ ৪ জন আলাউলের হাত-পা বেঁধে গলায় রশি পেছিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
ঘটনার পরদিন নিহত আলাউলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানিয়েছিল, গৃহশিক্ষক হিসেবে থাকাকালীন প্রতিবেশী ইয়াছমিন আকতার রুম্পার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় আলাউল। দীর্ঘ ৫ বছর সম্পর্ক থাকাকালে কয়েক বছর পূর্বে হাটহাজারীর বড়দিঘীর পাড় এলাকার এক ছেলের সাথে রুম্পার হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও তাদের সম্পর্ক ছিল এবং রুম্পা বাপের বাড়িতে আসলে আলাউলের সাথে দেখা করতো।
আর এ দেখাদেখি এবং পরকীয়ার ব্যাপারটি এক পর্যায়ে রুম্পার স্বামী জেনে গেলে তাদের পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এবং তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায় বলে আলাউলের এ বন্ধু জানায়।
এ ঘটনার আরও বেশ কিছুদিন পর রাউজানের ছেলে ইকবালের সাথে রুম্পার পুনরায় বিবাহ হয়। এর পর থেকে রুম্পা এবং তার স্বামী বায়েজিদ থানার অক্সিজেন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। বিয়ের পর স্বামী ইকবাল বিদেশে চলে গেলে রুম্পা ও আলাউলের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। পরে এ ঘটনা ইকবাল জানতে পেয়ে দেশে চলে আসে। এবং আলাউলকে বোঝানোর চেষ্টা করে এ পথ থেকে সরে যেতে বলে।
আলাউলেরর বন্ধুরা প্রথম থেকেই ধারণা করেছিল পরকীয়া প্রেমের জের ধরেই খুন হতে পারে আলাউল।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রাত দুইটার দিকে বায়েজিদ থানার পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় একটি চারতলা ভাড়া বাসার টয়লেট থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে বায়েজিদ থানার পুলিশ। প্রাথমিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায়।
পরদিন লাশের ছবি দেখে বাবা ও ভাই তা আলাউলের লাশ বলে শনাক্ত করে। এ নিয়ে ২৩ মার্চ রাতে বায়েজিদ থানায় আজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ে করেন আলাউলের পিতা।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের নিয়ে পরদিন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে “সাবেক প্রেমিকা ও তার স্বামীর দিকেই সন্দেহের তীর!” শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শেষ পর্যন্ত সে খবর সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এমকে/এনআই/মার্চ ২৯, ২০১৭)