চট্টগ্রাম অফিস : কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে চট্টগ্রামে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকা আধাবেলার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক নূরুল আলম নূরুকে হত্যার প্রতিবাদে রবিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ হরতাল ডাকা হয়েছিল।

তবে এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতালে ডাক দেওয়া হলেও বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন ছেড়ে চলে যান বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাদের এই চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হরতাল কর্মসূচির কার্যত সমাপ্তি ঘটে।

ছাত্রদলের ডাকা এ হরতালে অবশ্য চট্টগ্রামের প্রাত্যহিক নাগরিক জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। দোকানপাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কল-কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্মচলেছে। নগরীতে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন সকাল থেকে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করেছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দূর পাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

এদিকে, হরতাল ডাকলেও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের তেমন একটা রাস্তায় দেখা যায়নি। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বুলু, সাধারণ সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী ভোর থেকে নগরীর কাজীর দেউড়ি জামালখান, নিউ মার্কেট এলাকায় পুলিশের চোখ এড়িয়ে ঝটিকা মিছিল করে। পরবর্তীতে তারা সকাল ৮টার মধ্যেই দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে অবস্থান নেয়।

সেখানে ভোর ৬টা থেকে নেতা-কর্মীবিহীন অনেকটা নিঃসঙ্গভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর। অবশ্য পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে মিছিলের চেষ্টা করে নগর মহিলা দল। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে মহিলা দলের নেত্রীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ নগর মহিলা দল নেত্রী আঁখি সুলতানাসহ কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চালায়। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি।

সকাল পৌনে ১০টার দিকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ১০-১৫ জন নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে নাসিমন ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টাকালে নূর আহমদ সড়কে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে এবং লাঠিচার্জ করে ৬ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৩ জন হলেন-গাজি মনির, মহসিন খোকন, ও ইসতেহাক মানিক।

এদিকে, নগর বিএনপি সভাপতি ডাক্তার শাহাদাত ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের নেতৃত্বে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে। তবে বিএনপি অফিসের বাইরে কোনো নেতা-কর্মীকে বের হতে দেয়নি পুলিশ।

কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, হরতালে সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা কাউকে নাশকতা বা গাড়ি ভাঙচুর করতে দেইনি। নগর জুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।

চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া বাঁশখালী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ডসহজেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রদল সভা সমাবেশ ও মিছিল করেছে। তবেজেলাগুলোতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাতায়াতের ব্যাপারে আমরা একটু চিন্তিত ছিলাম। তবে পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। তারা সব উপজেলাতে সর্তক ছিল।

গত ২৯ মার্চ (বুধবার) রাতে নগরীর চকবাজার এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের খেলাঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নুরুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।পরে বিএনপি ছাত্রদল এ হত্যার প্রতিবাদে সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরী, চট্টগ্র্রাম উত্তর, দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য জেলা বান্দবানে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এপ্রিল ০২, ২০১৭)