দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন,  ‘দেশে খর্বকায় পেটমোটা শিশুর সংখ্যা কমেছে। তাই এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আফ্রিকার খর্বকায় পেটমোটা শিশুর ছবি বেশি দেখানো হয়। বাংলাদেশের শিশুদের ছবি কম দেখানো হয়।’

রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার (৫ এপ্রিল) ন্যাশনাল লো বার্থ ওয়েট সার্ভে ২০১৫-এর অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। ন্যাশনাল নিউট্রেশন সার্ভিসেস (এনএনএস) ও ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ নিউট্রেশন (আইপিএইচএন) এই কর্মশালার আয়োজন করে।

মোহাম্মদ নাসিম অরো বলেছেন, ‘দেশের মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য সচেতন হয়েছে। তাই দেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে অপুষ্টি।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘মায়ের সেবা যত্নের মধ্যেই সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্ম হয়ে থাকে। দারিদ্রতা ও শিক্ষার অভাবে দেশে অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্ম নিচ্ছে না। নানা সীমাবদ্ধতায় আমাদের দেশের মায়েরা অনেক ক্ষেত্রে গর্ভের শিশুর ব্যাপারে উদাসীন থাকে। যেদিন দেশের মানুষ সম্পূর্ণ দারিদ্রমুক্ত ও শিক্ষিত হবে সেদিন শতভাগ সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান শিশু জন্ম নেবে। মায়েদের সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান সন্তানের জন্মে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই কথা ভাবনায় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বড় বড় ক্লিনিক ও চিকিৎসকেরা প্রসূতিকে চটজলদি সিজার করানোর ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসাহ দিয়ে থাকে। এতে দেশে অনেক শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয়। এসব শিশু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক জটিল রোগসহ নানা সমস্যায় ভোগে। সমাজ ও দেশ এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. শরীফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন ডা. এ বি এম মুজহারুল ইসলাম। সার্ভের পটভূমি ও সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ড. জাকির হোসেন।

সার্ভের পটভূমি ও সারসংক্ষেপ তুলে ধরে ড. জাকির হোসেন বলেছেন, ‘জন্মের সময় যেসব শিশুর ওজন ২৫০০ গ্রামের কম হয় সেসব নবজাতককে কম ওজনের নবজাতক হিসেবে শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কম ওজনের নবজাতকের জ্ঞান কম বাড়ে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কার্ডিওভাসকোলার ডিজিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এই কম ওজনের নবজাতক সহজেই ডায়রিয়া ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। শিল্পন্নোত দেশে ৭ ভাগ এবং অনুন্নত দেশে ১৭ ভাগ কম ওজনের শিশু আছে বলে ১৯৯২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ ঘোষণা করে।’

তিনি আরো জানিয়েছেন, ১১৮ জন কালেক্টর, ১৬ জন সুপারভাইজার, ৪ জন কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট অফিসার, একজন ফিল্ড ম্যানেজার, একজন রিসার্চ অফিসার এই অনুসন্ধানে ডাটা সংগ্রহে যুক্ত ছিলেন। ৩২০০টি গ্রামের এবং ১৩০০টি শহরের সর্বমোট ৪৫০০ জন গর্ভবতীকে এই জরিপের আওতায় নেওয়া হয়। গর্ভবতী মায়েরা ৫৩.৫ ভাগ ছেলে শিশুর জন্ম দেন। এদের মধ্যে ৪২.৩ ভাগ মা বাড়িতে সন্তান প্রসব করেন। অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্তান প্রসব করেন ২৪.৫ ভাগ এবং ২৭.২ ভাগ। এসব নবজাতকের ওজনের হার গড়ে ২৮৯৮ গ্রাম। এই নবজাতকদের গড় দৈর্ঘ্য ৪৭.৩ সেন্টিমিটার।

দীর্ঘ ১৩ বছরের মাথায় এই সার্ভের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন। ২০০৩-০৪ সালে এ ধরণের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল বলে কর্মশালায় জানানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/জেডটি/এপ্রিল ০৫, ২০১৭)