দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সাযযাদ কাদির ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর।

তিনি রাজধানীল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ইন্তেকাল করেন। কবির ছেলে সাদ্দাম কাদির তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কবি সাযযাদ কাদির। বাংলা সাহিত্যের ষাটের দশকের অন্যতম কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক। তিনি দীর্ঘদিন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সাযযাদ কাদির ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার মিরের বেতকা গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায়। সাযযাদ কাদির ১৯৬২ সালে বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৬৯ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তিনি করোটিয়া সা’দত কলেজ-এর বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কলেজের চাকরি ত্যাগ করে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন এবং ১৯৭৮ সালে এটি ত্যাগ করে রেডিও বেইজিং-এ যোগ দেন। ১৯৮০ সালে রেডিও বেইজিং-এর চাকরি ছেড়ে দেন এবং ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় যুক্ত থাকেন। এরপর ১৯৮৫ সালে থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন আগামী-তারকালোক পত্রিকায়। পরবর্তীতে এটি ত্যাগ করেন ও দৈনিক দিনকালে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দৈনিক দিনকাল হতে ইস্তফা দিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে এবং ২০০৪ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত থাকেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সাযযাদ কাদির শুধু মাত্র কবিতাই নয় গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ-গবেষণা, শিশুতোষ, সম্পাদনা, সঙ্কলন, অনুবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- যথেচ্ছ ধ্রুপদ (১৯৭০), চন্দনে মৃগপদচিহ্ন (১৯৭৬), লাভ স্টোরি (১৯৭৭), রাজরূপসী, প্রেমপাঁচালী, হারেমের কাহিনী, পৃথিবীর প্রিয় প্রণয়ী, অপর বেলায়, অন্তর্জাল (২০০৮), রবীন্দ্রনাথ : শান্তিনিকেতন (গবেষণা), রবীন্দ্রনাথ : মানুষটি (গবেষণা), নারীঘটিত (প্রবন্ধ), খেই (উপন্যাস), বৃষ্টিবিলীন (কাব্যগ্রন্থ) ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গের নাথ সাহিত্য ও কৃষ্টি কেন্দ্রিক সাহিত্যপত্রিকা ‘শৈবভারতী’র ৩৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রবন্ধ সাহিত্যে সাযযাদ কাদিরকে শৈবভারতী পুরস্কার দেওয়া হয়। এর আগে তিনি ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণু দে পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০১৬ সালে তিনি পেয়েছেন জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার।

কবি সাযযাদ কাদিরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। এছাড়া কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক ও মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা ও মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সৈয়দ শাহজাহান সাজু ও সদস্য সচিব মো. শহীদুননবী ডাবলু, ভাসানী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক মতিয়ারা চৌধুরী মিনু।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এপি/এপ্রিল ০৬, ২০১৭)