‘কোনো ধর্মই বাল্যবিয়ে সমর্থন করে না’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইমান আলী বলেছেন, বাল্যবিবাহ কেন হচ্ছে? অনেকের কাছে এটি ট্রাডিশনাল। অনেকে আবার ধর্মের দোহাই দেন। কিন্তু ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান কোনো ধর্মই বাল্যবিয়ে সমর্থন করে না।
সিরডাপ মিলনায়তন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত প্রস্তাবিত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, হাদিসে উল্লেখ আছে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কথা। তাই বলে তো এই নয় যে, বাল্যবিবাহকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা মেয়েদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কারণ মেয়ে বড় হলেই এলাকার ছেলেরা পেছনে লেগে যাবে। চারদিকে বদনাম ছড়াবে। তাহলে তো মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য অনেক পরিবার মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
ইমান আলী বলেন, এখানে প্রশ্ন হল আমরা কী বাল্যবিবাহ রোধ করতে ইচ্ছুক নাকি নতুন কিছু করতে চাচ্ছি? বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দুই ধরনের বিবাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ ও শিশুবিবাহ। বাল্যবিবাহ থেকে শিশুবিবাহ রোধ করা বেশি প্রয়োজন। দুই একটি দেশ বাদে পৃথিবীর সব দেশে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। প্রশ্ন আসতে পারে তারপরও কেন তা রোধ করা হবে? এর জন্য স্বাস্থ্য একটি বড় কারণ। বাল্যবিবাহের ফলে ছেলেদের থেকে মেয়েদের স্বাস্থ্যে ঝুঁকি দেখা দেয়। ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়াও বাল্যবিবাহের কারণে জনসংখ্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নাবালকদের বয়স ১৮ না হয় ২১ বছর, যে কোনো একটি নির্ধারণ করুন। ১৮ বছর পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মেয়েদের ১৮ বছর হওয়ার পর তারা সাবালক হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর পার করার পরও কেন ২১ বছর পর্যন্ত সাবালক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ১৮ বছর হওয়ার পর ভোট দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু করতে পারবে, কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না। এভাবে তো সমঅধিকার হয় না। ছেলেমেয়ে সকলের সমঅধিকার হওয়া উচিৎ।
যৌন হয়রানি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, আমাদের দেশে মূল আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, যৌন হয়রানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটি বন্ধের জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মোবাইল কোর্ট করা হয়েছিল, কিন্তু কতটুকু সফল তা জানি না। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে আবেদনের পর ২০১৩ সালে এসে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নতুন করে করা হয়েছে। যাই হয়েছে ভালোই হয়েছে। মন্দের ভালো আরকি। আসলে এমন একটি আইন হওয়া উচিৎ যেটি বাস্তবায়ন করা যাবে।
শিশু অধিকার কমিটির সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রিয়াজুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, সদস্য অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম, ইমরান কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীর হোসেন, সামিয়া জামান, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এপি/সা/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)