কাদের সিদ্দিকীর অদৃশ্য আঁতাত
সাগর আনোয়ার, দ্য রিপোর্ট : টাঙ্গাইল (সখিপুর-বাসাইল) উপনির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর অংশগ্রহণ নিয়ে তিন দলের জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী রবিবার বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা দেন। টাঙ্গাইল-৮ আসনে আগামী ২৯ মার্চ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এনডিএফ’র একাধিক নেতা দ্য রিপোর্টকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জোটের কোনো নেতার সঙ্গেই কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করেননি কাদের সিদ্দিকী। উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী ব্যক্তিগতভাবে তার দল নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন।
জোট নেতারা বলছেন, কাদের সিদ্দিকীর উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জোটের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জোটের সিদ্ধান্ত ছিল, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো ধরনের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না এনডিএফ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি এবং কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সমন্বয়ে ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হয়। আত্মপ্রকাশের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন কাদের সিদ্দিকী।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে সরকারকে বৈধতা দেওয়া। সিদ্ধান্ত ছিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না এনডিএফ। তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। যা জোটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
তিনি বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, বিয়ের আগে সন্তান হলে সেই সন্তানকে কেউ ভালো চোখে দেখে না। সবাই ওই সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলে। এ সরকারের অধীনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরাও সবাই অবৈধ। অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী মূলত সরকারকে বৈধতা দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী একটি দেশের অনুরোধেই কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এ ধরনের একটি প্রচারণাও আছে। তবে যাই হোক, কাদের সিদ্দিকী কেন নির্বাচনে অংশ নিলেন তা তিনিই ভালো জানেন।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। জোটের অন্তর্ভুক্ত দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে শরীক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি।’
এ বিষয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। কে কী মনে করল তা আমাদের দেখার বিষয় না।’
এ বিষয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের পর একই বছর ১৫ নভেম্বর উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। সে নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর প্রতীক ছিল পিঁড়ি। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান। নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে কাদের সিদ্দিকীকে পরাজিত করা হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন।
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এনডিএস/সা/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)