যশোর অফিস : যশোরের উপজেলাগুলোতে দল সমর্থিত একক প্রার্থী নির্ধারণে আওয়ামী লীগের প্রথম দফার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে সমস্যার কোনো সুরাহা করতে পারেননি। ২৬ ফেব্রুয়ারি নেতারা আবার যশোর আসবেন এবং সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবেন জানিয়ে ঢাকা ফিরে গেছেন।

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিপরীতে বিএনপির রয়েছেন একজন করে প্রার্থী। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থী রবিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন।

এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি অভয়নগর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে পরাজিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কাছে। এমন অবস্থায় চিন্তিত আওয়ামী লীগ যশোরের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র থেকে একটি টিম পাঠায়। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এই টিম রবিবার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউসে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বসেন। বৈঠকে দলের জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর কেন্দ্রীয় নেতারা শার্শার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল মান্নান মিন্নু এবং ঝিকরগাছার চেয়ারম্যান প্রার্থী মুসা মাহমুদকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেন। জেলা কমিটির নেতাদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা নির্দেশনা দেন। কিন্তু উল্লিখিত দুই প্রার্থীর কেউই নির্বাচন থেকে সরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে, যশোর সদর আসনে একক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা ওঠলে জেলা কমিটির সভাপতি আলী রেজা রাজু, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান, সাবেক মেয়র এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু প্রমুখ সিনিয়র নেতা তৃণমূল পর্যায় থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে মত দেন। এ পর্যায়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী শাহীন চাকলাদার তৃণমূল ভোটের বিপক্ষে অবস্থান নেন। ফলে ঢাকা থেকে আসা নেতারা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। নিষ্ফলা দীর্ঘ বৈঠক শেষে তারা সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে যান।

সভাশেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু বলেন, কেন্দ্রীয় টিম এসেছিল মূলত ঝিকরগাছা ও শার্শার সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু প্রেসের কাছে বলা নিষেধ জানান রাজু।

সদর আসনে কাকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে আলী রেজা রাজু বলেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় টিম ফের যশোর আসবে। সে দিন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্ভাব্য প্রার্থী শাহীন চাকলাদার বলেন, সদর উপজেলার ব্যাপারে ২৬ তারিখের আগে কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।

সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আরও দুই সম্ভাব্য প্রার্থী মোহিতকুমার নাথ ও মাশুক হাসান জয়। জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিতকুমার নাথ বলেন, আমি তৃণমূল নেতাদের ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণের পক্ষে। কিন্তু শাহীন চাকলাদার তৃণমূল ভোট চান না। তাই সমস্যার সমাধান হয়নি। কোনো অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত মেনে নেব না যোগ করেন মোহিত নাথ।

যশোর সদরের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর ছেলে মাশুক হাসান জয়ও বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের ভোটাভুটি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।

রবিবার ছিল যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন। এ দিন চেয়ারম্যান পদে যে সাতজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের।

(দ্য রিপোর্ট/একে/এএস/সা/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)