চসিক কাউন্সিলরদের সংবাদ সম্মেলন
মহিউদ্দিনের সময়ে নালা দখল করে তৈরি স্থাপনা ভাঙ্গা হবে
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের সাথে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধর জের ধরে এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সকল নির্বাচিত কাউন্সিলর একযোগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে চসিকের ৫৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৩ জন কাউন্সিলর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। চসিক কাউন্সিলরদের জড়িয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের সময়ে নগরীর নালা নর্দমা দখল করে যত ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে সেসব স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। একই সাথে তারা সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী শাহেদা মহিউদ্দিন হত্যার রহস্য উম্মোচন এবং বিচার দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে চসিকের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি বলেন, ‘তিনি (মহিউদ্দিন) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে পাগলের আড্ডাখানা বলায় সম্মানিত ভোটারদের মধ্যে নানা সংশয় তৈরি হয়েছে, তা দূর করার জন্য আমরা কাউন্সিলররা এ সংবাদ সম্মেলন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনকে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন। আইন অমান্য করে অনেক পদের নিয়োগকে স্থায়ী করেছেন।’
এছাড়াও চসিকের নিজস্ব জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কোনো সুফল আসেনি। এগুলোর কারণে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসনি বলেন, চসিকের নির্বাচিত পরিষদের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলসহ নানা সময়ে নির্মিত এসব ভবন আমরা অপসারণ করব। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই আমরা এ কাজে হাত দেব।
আইনের মধ্যে থেকে এটা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবন অপসারণের আগে মালিকদের আমরা অন্য জায়গায় স্থানান্তরের সুযোগ দেব। পর্যায়ক্রমে এটা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নগরীর মুরাদপুরে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে নির্মিত এরকম অবৈধ স্থাপনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অপসারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি লালদীঘি ময়দানে এক শ্রমিক সমাবেশে মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে ১২টি খুনের অভিযোগ আনেন। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল মেয়র হাসনি বলেন, একজন নির্বাচিত মেয়র ও দলের সাধারণ সম্পাদককে ‘আপনি একজন খুনি’ বলবেন, এ বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজের ভাষা হতে পারে না। নির্বাচিত মেয়রকে এ ধরনের কথা বলা মানহানিকর। সাবেক মেয়র মহোদয় তার বক্তব্যে যে কাউন্সিলরের উদ্ধৃতি দিয়েছেন সে কাউন্সিলরের নাম তার বক্তব্যে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় ছিল এবং যে ১২ জন লোককে হত্যার কথা উল্লেখ করেছেন আমরা তার কাছ থেকে সে লোকগুলোর নাম, ঠিকানা জানতে চাই।
একই সাথে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার স্ত্রী সাহেদা মহিউদ্দিন হত্যার বিচার চাই। কাজের মেয়ে রানু, সন্তোষ, রবি, ওয়াজিউল্লাহ হত্যাকাণ্ডগুলো এ শহরের প্রবীণ মানুষদের বিবেককে এখনো নাড়া দেয় বলে উল্লেখ করেন কাউন্সিলররা।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে নিজ বাসায় থাকা ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী সাহেদা মহিউদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে চসিকের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের ৫৫ কাউন্সিলরদের মধ্যে ৫৩ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি দুজনের একজন বিদেশ এবং অন্যজন অসুস্থ থাকায় হাজির থাকতে পারেননি বলে জানানো হয়।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)