ককটেল-অগ্নিসংযোগে শেষ ৬০ ঘণ্টার হরতাল
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : সারাদেশে ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টায় শুরু হয়ে হরতাল শেষ হয় বুধবার সন্ধ্যা ৬টায়।
জানা গেছে, হরতালের তৃতীয় দিন বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮ পিকেটারকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তাদের আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আবু ইউসুফ দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ১৮ পিকেটারকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।’
এদিকে হরতালে রাজধানীতে পুলিশের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকায় ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া রাজধানীতে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন সোমবার ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় সোমবার সকালে হরতালকারীদের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হাতবোমা ছোড়া হয়।
এ সময় ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ (১৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির কর্মী ইকবাল হোসেন (২০) এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলকর্মী মোজাম্মেল হোসেনকে (২০) চারটি হাতবোমাসহ আটক করা হয়।
পরে নির্বাহী হাকিম প্রতাংশু হাওলাদারের আদালতে তাদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে জানান ওসি ।
এদিকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রামপুরা ব্রিজের কাছে একটি হিউম্যান হলারে আগুন দেয় হরতালকারীরা।
খবর পেয়ে বারিধারা ফায়ার ব্রিগেডের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান।
একইদিন রূপনগর থানার ইস্টার্ন হাউজিংয়ে সকাল ৬টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হায়দার আলীর বাসার পেছনে একটি হাতবোমা ফাটানো হয়।
এ বিষয়ে রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবে খোদা বলেন, ‘ভোরে বাসার পেছনের দেয়ালে একটি বিস্ফোরণ ঘটে বলে হায়দার আলীর পরিবার অভিযোগ করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।’
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে কারওয়ান বাজার ওয়াসা ভবনের সামনে ১০টি হাতবোমা ফাটানো হয়। বোমাবাজির পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমার ধারণা আশপাশের কোনো ভবনের ওপর থেকে ককটেলগুলো রাস্তায় ফেলা হয়।’ আশপাশের ভবনগুলোতে তল্লাশি চালানো হয় বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় একজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
এছাড়া সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেরুল বাড্ডায় মহিলা দল হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংসদ ভবন এলাকায় মঙ্গলবার হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়। সকাল ১০টার দিকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে সংসদ চত্বরে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এতে ১১ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
একই সময়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাজমা আকতার ও অপু উকিলের নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগের ৩০-৩৫ কর্মী লাঠিসোটাসহ হরতালবিরোধী মিছিল বের করে।
উভয় পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা সংসদ ভবন চত্বরে হরতালবিরোধীদের ঢুকতে দেয়নি।
বিরোধী দলের ৬০ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। শাহবাগ, গ্রিন রোড ও মানিকনগরে পাঁচটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। একইদিন হাজারীবাগে পুড়িয়ে দেওয়া লেগুনার অগ্নিদগ্ধ চালক আল আমিন (২৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিডিআর এক নম্বর গেইট এলাকায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আল-আমিনের লেগুনায় আগুন দেয় হরতালকারীরা। এতে আল-আমিনের শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।’
রাত ১০টার দিকে বেইলি রোড ও শান্তিনগর এলাকায় বিস্ফোরিত বোমার জখম নিয়ে রেজাউল (৩৪) ও হারুন (৩৫) নামে দুই রিকশাচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রায় একই সময় শাহজাহানপুর এলাকা থেকে আকাশ নামে এক পথচারী বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বলে পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল জানান।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটানো হয়। এতে আহত হন অন্তত তিনজন।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এমএ জলিল জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগে গাজীপুরগামী একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার অভিযোগে জুনায়েদ (২৫) নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তবে ওই যুবক কোনো দল করেন কী না, তা জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা জলিল।
রাত ৯টার দিকে গ্রিন রোডে আল রাজী হাসপাতালে সামনে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে দমকলকর্মীরা গিয়ে তা নেভায় বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মো. ফারহাদুজ্জামান জানান।
এদিকে সন্ধ্যার পর রাজধানী কোতোয়ালি থানার কাছে দুইটি ও চানখারপুল এলাকায় তিনটি এবং নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের কাছে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাত ৮টার দিকে মহাখালীতে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
সন্ধ্যায় টিএসসির পাশের একটি এটিএম বুথের কাছে দুইটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। একই সময়ে জসিম উদদীন হলের ক্যান্টিনের ছাদে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় আরও দুইটি ককটেল।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) আবু ইউসুফ বলেন, ‘রমনায় দুইজনকে দুই মাস করে, খিলগাঁও দুইজনকে ও বনানীতে তিনজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া সোমবার হরতালে নানা ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে আটক করা হয়।’
হরতালের আগের দিন রবিবার রাজধানীতে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা হয়েছে।
(দিরিপোর্ট২৪/কেজেএন/এনডিএস/এমডি/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)