দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের কঠোর সমালোচনা করলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান।

সিরডাপ মিলনায়তন চামেলী হাউসে (দ্বিতীয় তলা) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় রবিবার বিকেলে তিনি এ সমালোচনা করেন।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও সমাজকে সচেতন করার জন্য সকল স্তরের পাঠ্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। শুধু আইনে নয় তা বাস্তবায়িত করতে হবে। এটি একটি সঠিক উদ্যোগ। কিন্তু খসরা আইনের ১৬ ও ১৭ ধারায় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং শিশু ও অভিভাবকদের নিরুৎসাহিত করার কথা বলা রয়েছে। এটা তো আইনের মধ্যে পরতে পারে না। এটি কি আইনের ভাষা?’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘খসরার ১২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আদালত এই আইন অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার এক বছর পর কোনো অপরাধ আমলে নিতে পারবে না। কেউ যদি ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করে এক বছর পর প্রকাশ করলে কি শাস্তি হবে না? আবার ২০-এর ‘গ’ তে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তীকালে ধর্ষকের সঙ্গে বিবাহে বাধ্য করা হলে। ধর্ষণ আবার জোরপূর্বক হয় কিভাবে? খসরার ২৩-এ বলা হয়েছে, এই আইনের আওতায় আদায়কৃত অর্থদণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ পাবে। সংশ্লিষ্ট আদালত অর্থদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করা হবে। এও কি সম্ভব? কোনো পরিবারের শরীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করা কি সম্ভব?’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার ছেলেদের ভয়ে অথবা সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টের জন্য মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও কোনো লাভ আসলে হয় না। কারণ এটি এক ধরনের সামাজিক রোগ। বিয়ের পরেও অনেক মেয়েকে সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টের শিকার হতে হয়। বাল্যবিবাহের আইনটি যদি বাস্তবতার নিরীক্ষে প্রণয়ন করা হয় তাহলে তা বাস্তবায়িত হবে। বর্তমান ধর্মীয় আইনে আমরা প্রগতিশীল ব্যাখ্যা দিতে পারছি না এবং এর ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও পারছি না। আমাদের আরও পর্যবেক্ষণ করে খসরা আইনটিকে সংশোধন করতে হবে।’

শিশু অধিকার কমিটির সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রিয়াজুল হকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সদস্য অ্যাডভোকেট ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম, ইমরান কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীর হোসেন, সামিয়া জামান, মাসুম বিল্লাহ, অ্যাডভোকেট মাসুদা আক্তার, এম আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ফেরদৌসী আক্তার, সাবিনা নুপুর প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এসকে/এএল/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)