এ বছরই জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি
পাঁচ বছর পর নয়, এ বছরই জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আগামী সেপ্টেম্বরকে ‘টার্গেট’ করে এগুচ্ছে দলটি। সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলা রেখে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট। তবে সমঝোতার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
এর মধ্যে দেশি-বিদেশি সমর্থন আদায়ে চলছে জোর প্রচেষ্টা। কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি ছোট দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাও করবে তারা। এ সবের সমন্বয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে চূড়ান্ত বিজয় পেতে চায় বিএনপি। দাবি আদায়ে জুন-জুলাই মাসে সক্রিয় আন্দোলনে যেতে চায় তারা। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা যায়।
বিএনপি এবং জোট শরিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগামী জুনে অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই একটা সুরাহা চায় তারা।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আন্দোলন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না। দাবি উপেক্ষিত হলে সংগ্রামের মাধ্যমেই সফলতা আসবে। উপজেলা নির্বাচনে জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কাদের পক্ষে আছে।’
জুন-জুলাইয়ের দিকে দাবি আদায়ের জন্য সক্রিয় আন্দোলন প্রসঙ্গে জেনারেল মাহবুব বলেন, ‘আমরা কোনো সহিংসতা চাই না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছি। গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলন চলবে।’
মাহবুবুর রহমান মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল দেখে সরকারের উপলব্ধি হবে। সরকারের বোঝা উচিত গণমানুষ কি চায়।
তিনি বলেন, একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু বিএনপির দাবি নয়, আমাদের ১৯ দল আছে, বিশ্ববাসীও সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।
জানা যায়, আগামী সেপ্টেম্বরে মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচন আদায় করতে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চায় বিএনপি। দশম জাতীয় নির্বাচনের পরপরই সরকারের সঙ্গে বিএনপির একটি ‘গোপন’ সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার ভিত্তিতে মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশিদের চাপে বৃহৎ দু’দল প্রাথমিকভাবে রাজি হয়। তবে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। কারণ বৈঠকের ব্যাপারে কোনো পক্ষই মুখ খোলেনি।
৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী জোটের টানাপোড়েনে বিরোধী দল বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধ, হরতাল কর্মসূচির কারণে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিরাট একটা প্রভাব পড়ে। গার্মেন্টস শিল্পেও ছিল এর প্রভাব। যে কারণে বিদেশিদের মধ্যস্থতায় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দুই প্রতিনিধির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে একটা সমঝোতা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপি যেভাবে একতরফা নির্বাচন করে তিন মাস ক্ষমতায় ছিল। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগ চায় অন্তত ছয় মাস ক্ষমতায় থাকতে। বিএনপি তাতে রাজি। জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমাধান চায় দলটি।
এই বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বৈঠক এবং সমঝোতার ব্যাপারটি আমার জানা নেই।’
সূত্র মতে, সরকারের সমঝোতার ইঙ্গিতের কারণেই বিএনপি কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে আসে। ফলে তারা সরকারকে কিছু দিন সময় দিয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ হলে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে বিএনপি।
১৯ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সরকারের সঙ্গে একটা নির্বাচনী সমঝোতা চাই। সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমঝোতা না করে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। সরকারও পদত্যাগে বাধ্য হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া মার্চ থেকে তিনি তৃণমূল নেতাদের পুনর্জীবিত করতে জেলা সফর করবেন। এর মধ্যে পয়লা মার্চে রাজবাড়ী জেলা সফরের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পর ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো সফর করবেন তিনি। এর আগে আগামী দু’একদিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা যায়। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা কারাগারে থাকায় মহানগর কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছিল।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বসে নেই। কূটনীতিক সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে লন্ডনে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছেন তিনি। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাস সেপ্টেম্বরকে সামনে রেখে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপির যাত্রা শুরু পয়লা সেপ্টেম্বর। এ মাসেই দলের বিজয় দেখতে চান জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দল গোছানো, কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, নেতাকর্মীদের উজ্জ্বীবিত করাসহ দিচ্ছেন নানা দিকনির্দেশনা।
এদিকে তারেক রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী পেশাজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করছেন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন খালেদা জিয়া। শনিবার রাতে জাতীয়তাবাদী প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এইচএসএম/এনআই/এএল/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)