দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বেসরকারি সড়ক পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত অনেকেই খুব প্রভাবশালী বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিআরটিসির বাসচাপায় নিহত ছাত্রীর পরিবারের হাতে ক্ষতি পূরণের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

গত ১৬ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে বাসে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ায় সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ও মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই পর্যালোচনা সভাটি বুধবার হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

সিটিং সার্ভিস বন্ধে বিআরটিএর অভিযানের কারণে রাজধানীতে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। কোনো কোনো মালিক সিটিং সার্ভিস লোকাল করলেও ভাড়া নিচ্ছে আগের মতোই।

যারা গাড়ি চালাচ্ছেন না, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায়, আমরা কি..., আমাদের দেশের বাস্তবতা কি, আমার জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সাথে যারা জড়িত, তারা খুব সামান্য মানুষ নয়। তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী।’

তিনি বলেন, ‘যারা এসব বিষয়ে তাগিদ দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেবে, তারাই আবার কখনো কখনো এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে, ভোগান্তিটা হয় পাবলিকের, সাধারণ মানুষের। এটা হলো বাস্তবতা, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।’

পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কি সরকারের চেয়েও প্রভাবশালী- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শোনেন, সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী এ কথাটা ঠিক নয়। সরকার যখন এটা বাঁধন-কষণ শুরু করবে তখন ফস্কা গেড়ো হয়ে যায়। তখন আপনারাও বলেন সরকার বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।’

‘কখনো বলেন মালিকরা বাড়াবাড়ি করছে, শ্রমিকরা বাড়াবাড়ি করছে। সরকার যখন তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে যায় তখন কি হয়? তখন হয় রাতের অন্ধকারে সীতাকুন্ডে ওয়েস্কেল মেশিন পুড়িয়ে দেয়। হাজার হাজার মিছিল করে। তখন তাদের প্রতিরোধ করার মতো …একটা মব তৈরি হয়, তারপর কেউ আসে না।’

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘এটাই হলো বাস্তবতা আমি বজ্র আঁটুনি করতে গিয়ে ফস্কা গেড়ো হয়ে যাবে। এখানে রিয়েলিস্টিক অ্যাপ্রোচ মেনে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে।’

সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনায় সভা বুধবার

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত।’

‘বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে আমি সকালে ডেকে এনেছি, মালিক সমিতির দু-তিনজনের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের বলেছি, বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছে, এ বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি’ বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সিটিং সার্ভিস বন্ধের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার একটি সভা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ, যাত্রীদের প্রতিনিধিসহ আরও কিছু প্রতিনিধি নিয়ে বসে পুরো পরিস্থিতি রিভিউ করে এটা জনস্বার্থে বাস্তবভিত্তিক, ন্যায়ানুগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।’

বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যমে সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা ও ভাড়া বাড়ানোর প্রচেষ্টার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে- এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের পাঁয়তারা আছে কি না তা রিভিউ করলে বলা যাবে।’

এ পরিস্থিতিতে বিআরটিসির সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামানো হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন মানুষের দুর্ভোগ হয়। তোপের মুখে পড়ি আমরা। দোষটা আসে আমাদের ঘাড়ে। কি করব বলুন?’

দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন খাতের কাছে দেশবাসী জিম্মি, আপনি সরকারের একজন প্রভাবশালী ও তৎপর মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আপনি এ সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি রিজাইন করব আপনি চান? আমি প্রভাবশালী মন্ত্রী এ শব্দটাই খারাপ, ইয়েস আই অ্যাম একটিভ, নো ইনফ্লুয়েন্টশিয়াল। বর্তমানে পরিবহন সেক্টর কি আগের তুলনায় ভালো নয়? দু-একটি ব্যাপার নিয়ে বলবেন মন্ত্রী সাহেব আপনি একেবারে ব্যর্থ। ব্যর্থতার ভাগ আছে, সব তো ব্যর্থ নয়।’

এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এস ছিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এম/এপ্রিল ১৮, ২০১৭)