সেলিম আহমেদ, মৌলভীবাজার : এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে ধান, মাছ, গবাদি পশু মরে পচে যাওয়ায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পানি ও পরিবেশ দূষণের ফলে ইতোমধ্যে গণহারে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে হাওর এলাকায়। তবে চুন ও ওষুধ ছিটানো তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা মৎস্য অফিস।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তৃতীয় দিনের মতো চুন ও ওষুধ ছিটানো অব্যাহত রয়েছে। চুন ও ওষুধ ছিটানোয় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে বুধবারও হাওরে আগের দিনের কিছু মরা মাছ ভাসতে দেখা গেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে হাকালুকি হাওর তীরের সাদিপুর মৎস্যজীবী গ্রামে মাছ ধরা ও খাওয়া বন্ধ করতে জনসচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সকল প্রকার মাছ শিকার থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতি দেখে মৎস্যজীবীরাও মাছ শিকার থেকে বিরত রয়েছেন।

এ অবস্থায় দেশের প্রধান এই মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডারে মাছপ্রাপ্তিতে একটা বিপর্যয় নামতে পারে বলেও ধারণা করছেন তিনি।

কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল রাতে ঝড়ের পর ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ এপ্রিল থেকে কুলাউড়া হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল, মাত্র ৩ দিনে, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০ জন এবং বহির্বিভাগে ২ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই হাওরপারের লোকজন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘গরম, সেই সাথে হাওরের পচা পানিতে একটা বিপর্যয় তো হবেই। পচা পানি কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাবে না এবং থালা-বাসনও ধোয়া যাবে না। হাওরাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি এবং গোটা উপজেলার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।’

কুলাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুদ্দিন জানান, হাঁসের মড়ক প্রতিরোধে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জনসচেতনামূলক সভা ও মাইকিং এবং খামারিদের মাঝে জীবাণুনাশক বিতরণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের বিনামূল্যের চিকিৎসা ও টিকাদান প্রদান করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হাকালুকি হাওরে পরিবেশ অধিদফতরের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক পরামর্শক বশির আহমদ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘হাকালুকি হাওরকে ১৯৯৯ সালে সরকার প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে চলমান এই বিপর্যয়ের মতো বিপর্যয় এর আগে দেখা যায়নি। এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। পুরো ইকো সিস্টেমের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। পচা মাছ, পানি কিংবা জলজ উদ্ভিদ খেলে মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীর প্রাণনাশের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সকল ক্ষেত্রেই আমাদের সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

(দ্য রিপোর্ট/এজে/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ২০, ২০১৭)