হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ
চট্টগ্রাম অফিস : অবশেষে হালদায় ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাতে ‘নমুনা ডিম’ ছাড়ার পর মধ্যরাতে ডিমের দেখা পান সংগ্রহকারীরা।
এক বছর বিরতি দিয়ে ডিম ছাড়ায় শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন সংগ্রহকারীরা।
হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুরুল কিবরীয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাতে নাপিতের ঘোনা এলাকায় প্রথমে মা-মাছের ডিম দেখতে পান বিশেষ ধরনের জাল, বালতি, নৌকা, সার্চলাইট নিয়ে অপেক্ষমাণ ডিম সংগ্রহকারীরা। এরপর খলিফার ঘোনা, রামদাশ মুন্সিরহাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা। ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে ভোররাতেই হালদায় ছুটে যান বলে জানান তিনি।
প্রতিটি নৌকা গড়ে এক বালতি (১৬ কেজি) করে ডিম আহরণ করতে পেরেছে।
ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা বংশ পরম্পরায় শিখে আসা কৌশলে মাটির গর্তে পানি দিয়ে ডিমগুলো থেকে রেণু তৈরি করবে চার দিনে।এরপর সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ছেড়ে দিয়ে পোনা তৈরি হবে।ওই সময় বুঝা যাবে কোনটি কোন মাছের পোনা।
গত বছর দুই শতাধিক নৌকা মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করেছিল দিনের পর দিন।ডিম না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
অতীতের মতো যাতে কেউ মা-মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে হালদা নদীতে টহল দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। এ নদী পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় তানার বদনাতলী পাহাড় থেকে সৃষ্ট হয়ে ফটিকছড়ির রাউজান, হাটহাজারীর কালুরঘাট স্থান অতিক্রম করে কর্ণফুলী নদীতে মিশে গেছে।
নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার।এর পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরং, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, বোয়ালিয়া, চানখালী, সর্ত্তা, কাগতিয়া, সোনাইখাল, পারাখালী, খাটাখালীসহ বেশ কিছু ছোট ছোট ছড়া। নদীটির গভীরতা স্থান বিশেষ ২৫ থেকে ৫০ ফুট। হালদা নদী থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছের সরাসরি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
গত শতকের পঞ্চাশ দশকে দেশের মোট মৎস্য চাহিদার ৭০ ভাগ পূরণ করত হালদা নদীর পোনা।কিন্তু রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাব, মা-মাছ শিকার, নদীর বাঁক কাটাসহ বিভিন্ন কারণে হালদা নদীর ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হালদা নদীর ৪টি বাঁক কেটে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট নির্মাণ, মা-মাছ নিধন, হালদা সংলগ্ন এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠাই এ নদীতে মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৪৬ সালে হালদা নদীতে ৪ হাজার কেজি ডিম দেয় মা-মাছ। এরপর থেকেই মা মাছের ডিম দেওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে। ১৯৯৭ সালে ৩০০ কেজি এবং ২০০৫ সালে ১৫০ কেজিতে নেমে আসে। ২০০৭ সালে এর পরিমাণ বেড়ে ৩৫০ কেজিতে উন্নতি হয়।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি ডিম দেওয়ার উপযোগী মাছের ওজন পাঁচ কেজি থেকে এক মণ পর্যন্ত। হালদা নদীতে মাছের রেণু সংগ্রহ করার প্রধান মৌসুম হলো বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবশ্যা এবং পূর্ণিমার প্রবল বর্ষণ এবং মেঘের গর্জনের মুহূর্তে। এ সময় মা-মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপ্রিল ২২, ২০১৭)