ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আজ (২৩ এপ্রিল) জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনে আশপাশের ৫’শ স্বাধীনতাকামী মানুষকে ধরে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড় করিয়ে পাথরাজ নদীর পাড়ে রাজাকারদের সহায়তায় হত্যা করা হয়।

রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ কেউই রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। সেই গণহত্যায় আত্মদানকারীদের স্ত্রীরা আজও বেঁচে আছেন অর্ধাহারে-অনাহারে। তাদের খোঁজ কেউ নেয়নি।

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল এই দিনে জাটিভাঙ্গায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার এদেশীয় দোসররা একই সঙ্গে তিন হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। চকহলদি, জগন্নাথপুর, সিঙ্গিয়া ও বাসুদেবপুরসহ ১২ গ্রামের শত শত মানুষকে পাকিস্তানিরা মেশিন গানের গুলিতে হত্যা করে।

পাকিস্তানি বাহিনী চারদিকে মানুষ মেরে ফেলছে শুনতে পেয়ে জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরীসহ বহু গ্রামের কয়েক হাজার বাঙালি নর-নারী ও শিশু ২৩ এপ্রিল ভোরে ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে তারা ওঠেন জাঠিভাঙ্গা এলাকায়।

পাকিস্তানিরা সেই দলের সব পুরুষকে মিছিল করার কথা বলে নিয়ে যায় জাটিভাঙ্গা মাঠে। সেই মাঠে পাকবাহিনীরা গুলি করে হত্যা করে সব পুরুষকে। এ হত্যাকাণ্ড চলে বিকেল পর্যন্ত। পরে তারা চলে গেলে এ দেশের দোসররা পাশের নদীর পাড়ে লাশ ফেলে মাটি চাপা দেয়।

গণহত্যায় আত্মদানকারীদের ৩’শ বিধবা আজও বেঁচে আছে খেয়ে না খেয়ে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও আজও অনেকেই বয়স্ক বা বিধবা ভাতার বাইরেই রয়ে গেছেন। তারা আজও ভোলেননি সেই নরকীয় গণহত্যার কথা। জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে আজও তারা বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর আজও পাননি স্বজন হারানোর বিচার।

এই পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক সরকারের কাছে এমন অনুরোধ করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় জাঠিভাঙ্গা গণহত্যার শহীদের পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)