দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : হাওরাঞ্চলের বিপর্যয়কে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা এবং হাওরে কেন বিপর্যয় নেমে এসেছে তা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। হাওরের মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ-এর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, টিআইবি'র চেয়ারপার্সন ও মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘হাওরবাসীকে রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে হাওরাঞ্চলের মহাবিপর্যয় মানব সৃষ্ট কিনা তা তদন্ত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘খুঁজে বের করতে হবে এই দুর্যোগের কতখানি মানবসৃষ্ট এবং কতখানি দুর্নীতির কারণে ঘটেছে, কতখানি দায়িত্ব অবহেলার কারণে ঘটেছে, কতখানি এই মানুষগুলোর জীবনের প্রতি অবজ্ঞার কারণে ঘটেছে, কতখানি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মধ্যে নীতির ভুলভ্রান্তির কারণে ঘটেছে? এ বিষয়গুলো তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ টাকার শতভাগ সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না, এমন দাবি করে তিনি বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি-অনাচার চলে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ারদের জবাব দিতে হবে কেন এই বিপর্যয় ঘটেছে।’

জলমহল ইজারা দেওয়ার সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘জলমহল রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ কেন ইজারা দেওয়া হচ্ছে তা জানার অধিকার দেশবাসীর রয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, কয়েকদিন পরে নদী এবং সাগরও ইজারা দেওয়া হবে। অথচ জলমহল ইজারা দেওয়া অসাংবিধানিক। সরকার কোনো অবস্থাতেই ইজারা দিতে পারে না।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন-গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

সংবাদ সম্মেলনে হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ১০টি দাবি তুলে ধরে বলা হয়, বোরো চাষের উপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পবিারকে খাদ্য সহায়তার নিশ্চিয়তা দিতে হবে, হাওরের সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে, সরকারি-বেসরকারি সব ধরণের ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করতে হবে, হাওরের পানিবাহিত রোগের প্রকোপ যাতে দেখা না দেয় এর জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং একই সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সুস্থ রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, হাওরের সব জলমহালের লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত জলাশয়ে সবাইকে মাছ ধরার অধিকার দিতে হবে, হাওরের পরিবেশ দূষণের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে হবে, বাঁধ নির্মাণে জড়িত দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের পাশাপাশি প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র সংরক্ষণসহ পরিবেশ অনুকূল উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/জেডটি/এপ্রিল ২৪, ২০১৭)