আলমগীর হোসেন, দ্য রিপোর্ট : বগুড়া জেলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুইশতাধিক সদস্যের প্রতি নজরদারি নেই। জেএমবির বেশিরভাগ সদস্য একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল-হাজত খেটে এখন বাইরে বেরিয়ে গোপনে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ আত্মাগোপনে আছেন।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের কর্নিপাড়া গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক নাজির হোসেনের ছেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই।

এই বাংলাভাই নিজ উপজেলা থেকে শুরু করে পুরো জেলায় তার অনেক অনুসারী তৈরি করেছিলেন। সে সময়ে এ জেএমবি সংগঠন নিষিদ্ধ করার পর গত ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জেলার গাবতলীসহ বগুড়ায় উল্লেখযোগ্য এ সংগঠনের তালিকাভুক্ত সদস্যদের পুলিশ এবং র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছিল। সে সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি তালিকা থেকে জানা গেছে, এ জেলায় দুইশতাধিক জেএমবির সদস্য আছে।

এ সব গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যর অধিকাংশ এখন জেলখানার বাইরে রয়েছেন। জেএমবি সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর প্রশাসনের তালিকা থেকে নাম কেটে নিয়ে অনেকটাই নিরাপদে থেকে ধীরগতিতে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেএমবির এই অনুসারী সম্প্রতি বগুড়া জেলায় সক্রিয় হয়ে উঠছে মর্মে উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাভাইসহ ৬ জন জেএমবি সদস্যর একসঙ্গে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর সকল জঙ্গি সদস্য আত্মাগোপনে থাকলেও এখন তারা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। বগুড়ার জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক সহিংস আন্দোলনে জেএমবিসহ সমমনা আরও কিছু জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

বগুড়ায় গত বছরের ৩ মার্চ কারারুদ্ধ জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে গুজব রটিয়ে যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালানো হয়, তাতে বিক্ষুব্ধ মানুষের ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকা অনেক জঙ্গি অংশগ্রহণ করে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা জামায়াত ও শিবিরের সহিংস কর্মসূচি বিশেষ করে শব্দবোমা, গানপাউডার ছিটিয়ে দ্রুত অগ্নিসংযোগ করে গেরিলা কায়দায় পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

বিশেষ করে ঢাকা-বগুড়া ও বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে বগুড়া সদরের সাবগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, জয়বাংলা হাট এলাকায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের রাত থেকে এবং বিরোধী দলের হরতাল চলাকালে রাস্তায় তাজা গাছ কেটে মহাসড়কে ব্যারিকেড দেওয়া, বোমাবাজি এবং গানপাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জেএমবির সাবেক সদস্যরা জড়িত বলে সূত্র জানায়।

এসব ঘটনা নিয়ে গত বছরের আগস্ট মাসে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার তিনদিন পর বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র, জেহাদি বইসহ তিন জঙ্গি সদস্যকে র‌্যাব-১২ গ্রেফতার করে।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানা যায়, জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাই জীবিত থাকাকালে বগুড়া সদরের সাবগ্রাম, শাজাহানপুরের নিশ্চিন্তপুর, গাবতলী উপজেলার লাঠিগঞ্জ কর্নিপাড়া, জয়ভোগা এবং সারিয়াকান্দির দুর্গম চরাঞ্চলে নিয়মিতভাবে জঙ্গিদের গোপন আস্তানায় নাশকতা প্রশিক্ষণ এবং বোমা তৈরির কলাকৌশল শেখানো হতো। কিন্তু শায়খ রহমান ও বাংলাভাইয়ের ফাঁসি কার্যকরের পর সাময়িকভাবে বগুড়ার জঙ্গি নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ দলের আন্দোলন কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা পুনরায় সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বগুড়ার ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হুদা উজ্জ্বল জানিয়েছেন, তার পৈত্রিক বাড়িতে হামলার ঘটনায় মুখচেনা জঙ্গিরা অংশ নেয়। হামলার সময় তারা গ্রেনেড ব্যবহার করে।

জেলার গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘এ উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির মোট কতজন সদস্য আছে, তা জানা নেই। তবে সাম্প্রতিককালে জেএমবির একজন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় তাকে সপ্তাহে দুইদিন থানায় হাজিরা দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।’

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সায়েম বলেন, ‘অধিকাংশ সদস্য আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে গেছেন। আদালত যাদের সামাজিক জীবনযাপনের নিদের্শ দেয়, তাদের প্রতি আমরা কোনো নজরদারি করতে পারি না।’

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘জেএমবির যে সব সদস্য জামিনে আছেন, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি আছে।’

গত বছরের ৩ মার্চ থেকে জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির মধ্যে জেএমবির সম্পৃক্ততা থাকার পরও তাদের কেন গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো থানাগুলোতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সে সব মামলায় একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য বগুড়া জেলার এসপি মোজাম্মেল হকের (পিপিএম) সরকারি সেলফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এমসি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)