শেয়ারবাজার মামলার চারটিতে জেল-জরিমানা, তিনটিতে খালাস
শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রায় ২ বছর হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে ৭টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে এই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে। এরমধ্যে ৪টি মামলায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও বিভিন্ন অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করেছেন বিচারক। অন্য ৩টি মামলায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে আসামিদের।
২০১৫ সালের ২১ জুন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২৪টি মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখিত ৭টি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে বা রায় হয়েছে। এরমধ্যে বিচারক হুমায়ুন কবীর ৬টি মামলার রায় দিয়েছেন। পরে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হওয়া বিচারক আকবর আলী শেখ একটি মামলার রায় দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যে ২৪টি মামলা স্থানান্তরিত হয়েছে, এরমধ্যে ৭টি মামলার রায় হওয়ার পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৫টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আর বাকি ১টি মামলার বিচারকাজ চলছে।
ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট। ওই রায়ে ফেসবুকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রচারের দায়ে জনৈক মাহবুব সরোয়ারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ সালের চিক টেক্স শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির এমডি মাকসুদুর রসুল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়।
একই বছরের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডের (বর্তমান নাম বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম ও একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এনায়েত করিমকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা কার হয়।
এরপর ২০১০ সালে প্লেসমেন্টের নামে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয় সাত্তারুজ্জামান শামীমকে। ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর এ রায় দেওয়া হয়।
২০০২ সালে দায়ের করা মামলায় সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্টের (সাবিনকো) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় একমাত্র আসামি ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুতুবউদ্দিন বেকসুর খালাস পান। এ রায় দেওয়া হয় ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানকে ২ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়। সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০০৪ সালে বিএসইসির তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ আলী খান ও পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে বিএসইসির পক্ষে এ মামলা দায়ের করেছিলেন।
সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় অভিযুক্ত র্যাংগস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ এইচ চৌধুরী বেকসুর খালাস পেয়েছেন। একইসঙ্গে অভিযোগ থেকে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজকে খালাস দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ঘটনায় বিএসইসির দায়েরকৃত ১৩টি মামলা ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরিত হয়েছে। এরমধ্যে ২টির রায় সম্পন্ন হয়েছে, ১টি বিচারাধীন ও ২টি মামলা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বাকি ৮টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এ মামলাগুলোর বিচারকার্য শুরু করতে পারছে না ট্রাইব্যুনাল।
স্থগিত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে-এইচএমএমএস ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ইমতিয়াজ হোসেন অ্যান্ড কোং, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, দোহা সিকিউরিটিজ, আমান সি ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ, এপেক্স ফুডস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা।
এরমধ্যে এইচএমএমএস ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলার বিচারকাজ ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে স্থগিত রয়েছে। এ মামলার আসামিরা হলেন-হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ, মোস্তাক আহমেদ সাদেক, সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ, শরিফ আতাউর রহমান ও আহমেদ ইকবাল হাসান।
ইমতিয়াজ হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি ২০১১ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে। এ মামলার আসামি হলেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইমতিয়াজ হোসেন।
২০০৬ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা। এ মামলার আসামিরা হলেন-রিজওয়ান বিন ফারুক ও এমকেএম মহিউদ্দিন।
দোহা সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা ২০০৩ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে। মামলার আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের মালিক একেএম শামসুদ্দোহাকে।
আমান সি ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এপেক্স ফুডসের মামলা দুটি ২০১৫ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে। জাফর আহমেদ ও জহুর আহমেদ দুজনই এই দুই মামলার আসামি। এরমধ্যে জাফর আহমেদ প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জহুর আহমেদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
২০১৩ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা। এ মামলার আসামিরা হলেন-কোম্পানির পরিচালক মোহাম্মদ ভাই ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা। এই মামলার আসামিরা হলেন-এম. জে আজম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ ও প্রফেসর মাহবুব আহমেদ।
(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ২৫, ২০১৭)