দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে দেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে গত ১২ বছরে নিহত হয়েছে ১৩ হাজার ২১১ জন শ্রমিক। আহত হয়েছে ১৮ হাজার ৯০ জন।

 

রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) একটি সামাজিক সংলাপে বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ওশি ফাউন্ডেশন) নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন এসব তথ্য জানিয়েছেন। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০১৭ উপলক্ষে ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার’ শীর্ষক এ সামাজিক সংলাপের আয়োজন করে ওশি ফাউন্ডেশন এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

মূল আলোচনায় ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেছেন, ‘ওশি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বছরের প্রথম ৩ মাসে পেশাগত দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ২২৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আর আহতদের মধ্যে ৪৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-এর হিসাবে কর্মক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ২৩ লাখ শ্রমিক মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা যায় গড়ে ৬ হাজার ৩০০ শ্রমিক। এসব দুর্ঘটনায় বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশ অপচয় হয়, তবে বাংলাদেশে পেশাগত দুর্ঘটনায় জিডিপির কত শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান অনুপস্থিত।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিকের প্রাণহানীর পরে আমাদের একটা শিক্ষা হয়েছে। ওই ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নটি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘দেশের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিটে পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ২০ হাজার শ্রম পরিদর্শক। কিন্তু কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে রয়েছে ৫৭৫ জন শ্রম পরিদর্শক।’

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনের সাথে সাথে সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে দেশীয় আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘নারায়নগঞ্জ এবং টঙ্গীতে পেশাগত রোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আহত অক্ষম শ্রমিকদের জন্য অ্যাকসিডেন্টাল ইন্সুরেন্স আলাদাভাবে একটি বিশেষ স্কিমের মাধ্যমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে পাইলট ভিত্তিতে স্কিমটি চালু করা হবে।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে এবং ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এস এম মোর্শেদের সঞ্চালনায় সংলাপে ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সাকি রিজওয়ানা, জাতীয় শিল্প, স্বাস্থ্য ও সেইফটি কাউন্সিলের সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি. জে (অব.) আবু নাইম মো. শহীদুল্লাহ, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, অধ্যাপক ড. রওশন মমতাজ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-এর সিনিয়র লেবার ইন্সপেক্টর এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আলবার্তো সারডা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/এপ্রিল ২৭, ২০১৭)