দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : টেলিভিশন প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে ওয়ালটন। সম্প্রতি ওয়ালটন উদ্ভাবন করেছে কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির আগামী প্রজন্মের স্পেকট্রা কিউ টিভি। এলইডি টিভিতে ওয়ালটনের ২৮টি নতুন প্যাটেন্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। গত বছর ওয়ালটনের এলইডি টিভির বিক্রি বেড়েছে ৩১৩ শতাংশ। গত বাণিজ্য মেলায় রেকর্ড পরিমাণ টিভি বিক্রি হয়েছে তাদের। এলইডি টেলিভিশনে বর্তমানে বাংলাদেশে সিংহভাগ বাজার ওয়ালটনের।

জানা গেছে, ব্যাপক বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে ওয়ালটন টিভি কারখানা। দেশেই বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এলইডি টেলিভিশন প্রস্তুত হচ্ছে। গত বছর জার্মান থেকে আনা হয়েছে অপটিক্যাল গ্রেড এক্সট্রুশন মেশিন। অত্যাধুনিক হাইড্রোলিক ডাই কাটিং ও দ্রুত গতির ডট প্রিন্টিং মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। জার্মান প্রযুক্তির এসব ব্যাকলাইট (শুধু পর্দা ছাড়া টিভির অন্য সব অংশকে ব্যাকলাইট বলা হয়) ফ্লিম ওয়ালটন এলইডি টিভির মান আরও বাড়িয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ টেলিভিশন গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। যেখানে প্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করছেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা।

অন্যদিকে আধুনিক যন্ত্র স্থাপনের ফলে কমেছে উৎপাদন খরচ। কমেছে বিদ্যুৎ খরচ। বেড়েছে বিক্রি। ফলে দফায় দফায় এলইডি টিভির দাম কমাচ্ছে ওয়ালটন।

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্লাস্টিক কেবিনেট, স্পিকার, রিমোট কন্ট্রোল ইউনিট, মাদার বোর্ড এবং প্যানেল প্রডাকশনের জন্য পৃথক পৃথক ম্যানুফাকচারিং লাইন স্থাপন করা হয়েছে গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত ওয়ালটন মাইক্রো-টেক কর্পোরেশনে। যেখানে এলইডি টিভির মৌলিক কাঁচামাল থেকে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশই তৈরি হচ্ছে। এর ফলে, অতীতে এ খাতের সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে এলইডি টিভি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা এলইডি টিভি।

উল্লেখ্য, দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনেরই আছে আইএসও স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। দেশব্যাপী রয়েছে ৬৫টি সার্ভিস সেন্টার ও ৩ শতাধিক সার্ভিস পয়েন্ট। যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৩ হাজার প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান।

ওয়ালটন টেলিভিশন বিপণন বিভাগের প্রধান আব্দুল বারি জানান, আগের বছরের তুলনায় গত বছর তাদের এলইডি টিভির বিক্রি বেড়েছে ৩১৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ছে দেশিয় ব্র্যান্ডটির মার্কেট শেয়ার। এ বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০৩ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান গ্রাহক চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা সহজেই অর্জিত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তাদের সাহস যোগাচ্ছে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার রেকর্ড। মেলায় গত বারের চেয়ে ১১৮.২১ শতাংশ বেশি এলইডি টিভি বিক্রি হয়েছে।

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য মেলা ক্যান্টন ফেয়ারে ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছে ওয়ালটন টিভি। উচ্চমান বজায় রেখে বাংলাদেশে তৈরি বলেই মেলা কর্তৃপক্ষ ওয়ালটন এলইডি টিভি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। এলইডি টিভিতে ওয়ালটনের ২৮টি নতুন প্যাটেন্ট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে টেলিভিশন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ওয়ালটন টেলিভিশন সোর্সিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক্স, অপ্টিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ডিজাইনিংসহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে ওয়ালটন। এরই ধারাবহিকতায় টেলিভিশন গবেষণায় ওয়ালটন উদ্ভাবন করেছে কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির আগামী প্রজম্মের স্পেকট্রাকিউ টিভি। যার মাধ্যমে বিশ্ব টেলিভিশন গবেষণায় ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। যেখানে সাধারণ প্রযুক্তির টেলিভিশনে কালার প্রদর্শনের ক্ষমতা ৬৮ থেকে ৭০ শতাংশ, সেখানে ওয়ালটনের স্পেকট্রাকিউ টিভি ৯৮.৭ শতাংশ পর্যন্ত কালার প্রদর্শনে সক্ষম।

তিনি আরো বলেন, আইএসও ক্লাস সেভেন ডাস্ট ফ্রি ক্লিন রুমে তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রযুক্তির ওয়ালটন এলইডি টিভির আইপিএস এবং এইচএডিএস প্যানেল। যা প্যানেলের গুণগত মান ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে।

এছাড়া বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তির জিরো বেজেল ডিসপ্লে’র মতো যুগান্তকারী ধারণা নিয়ে কাজ করছেন ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলীরা। ওই প্রযুক্তির টিভি আগামী বছরেই উৎপাদন এবং বাজারজাত করবে ওয়ালটন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপ্রিল ২৯, ২০১৭)