চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির গার্ড রুমে ধরে নিয়ে ৪ কিশোরের উপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় আদালত দায়ী নৌ-বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশ কমিশনার, ডিসি এবং ইপিজেড থানার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক এসএম মাসুদ পারভেজ এ নির্দেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৪ কিশোরের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মানস দাশ। শনিবার (০৬ মে) বিকেলে আদালতে আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌছেছে বলে জানান তিনি।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশর নৌ-বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে আদালতের আদেশের কপি পেয়েছেন স্বীকার করে বলেন, আদালতে নির্দেশে মামলা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া এই চার শিক্ষার্থীকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী নৌবাহিনীর হেফাজতে থাকাকালীন তার আসামিদের অমানসিক নির্যাতন করা হয় বলে আদালতকে দরখাস্তের মাধ্যমে অবগত করেন। এরপর আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীর দেওয়া দরখাস্ত ও আসমিদের শরীরের জখম বিবেচনা করে নৌবাহিনীর দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয় পুলিশকে।

এ-ব্যাপারে আসামিপক্ষের আইনজীবী মানস দাশ জানান, নৌবাহিনীর মামলায় গ্রেফতার চারজনই শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়, তাদের হেফাজতে থাকাকালীন যা সম্পূর্ণ আইনিবিরোধী।

তিনি আরো জানান, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ২ (৫) ধারা অনুযায়ী যেহেতু নৌবাহিনীর সদস্যদের হেফাজতে আসামিদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেহেতু আসামিদের জবানবন্দি হতে প্রকাশিত নৌবাহিনীর সদস্য রনি মিয়া, হোসেন, মাজেদুল, মিজান-সহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী মামলা রজু করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সংশ্লিষ্ট ডিসি ও ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন আদলত।

এছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে আগামীকাল ৭ই মের মধ্যে আসামিদের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন ও নির্যাতনের সঠিক সময় উল্লেখ করে একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামে ইপিজেড থানার নেভি গেইট এলাকায় অবস্থিত বাসমতি রেস্টুরেন্টের সামনে আড্ডা দেওয়ার কারণে বিএফ শাহীন কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল হক (১৮), কুমিল্লা রেসিড্যানশিয়াল কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল হাসান, বেপজা পাবলিক স্কুল থেকে সদ্য এসএসসি পাশ শিক্ষার্থী সীমান্ত বড়ুয়া ও এলএমএফ কোর্সে অধ্যয়নরত প্রসেনজিৎ মজুমদারকে ধরে নিয়ে যায়।

তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা এ ৪ শিক্ষার্থীকে নৌ বাহিনীর লোকজন গার্ড রুমে ধরে নিয়ে তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে মাথা মুড়িয়ে দিয়ে রাতে থানায় সোপর্দ করে। তাদের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর সদস্য মো. রনি মিয়া (পি এম-২) বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা এবং নৌ-সদস্যের উপর হামলার অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, কেউ অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা যেতে পারে। তাকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থা কাউকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতে পারে না।

৪ কিশোরকে নিয়ে যা ঘটেছে তা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে এ আইনজীবী জানান, যারা এ জঘন্য ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তির সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দু্ই একজন খারাপ লোকের কারণে পুরো বাহিনীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/মে ০৬, ২০১৭)