দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ১১ ঘণ্টা অস্ত্রের মুখে রেখে ও জোর করে মদপান করিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার ঘটনায় ফরেন্সিক পরীক্ষার পর আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে (ফরেনসিক টেস্ট)। রবিবার (মে ৭) দুপুরে তাদের শারীরিক পরীক্ষা জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়।

ধর্ষণের আলামত প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘দুই ভিকটিমকে আমরা পেয়েছি। ৫ সদস্যর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তিনটি করে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো হলো- মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে পারবো। যেহেতু তারা বলছেন ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের। তাই এতোদিন পর ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যাবে কিনা- তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’

সোহেল মাহমুদ ছাড়া কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের প্রধান শরীফ আকতারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘এই ধরনের কোনো অপরাধ বিশেষ করে সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের ক্ষেত্রে শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। সে সময়ের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা হলেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য উপযোগী নমুনা পাওয়া যায়। তবে সময়টা যত পার হবে ততই তা পাওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকবে।’

ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষার সেই সময়টুকু বলা হয় ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের ঘটনার পর সমাজে হেয় হওয়ার ভয়ে অনেকেই বিষয়টি চেপে যান।

তিনি আরও বলেছেন, ‘সময় পেরিয়ে গেলেই যে সকল সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় সেটি অবশ্যই নয়। ঘটনার সময় ভিক্টিমের পরনে থাকা পোশাক থেকে অনেক নমুনা পাওয়া যায়। সেগুলো ধুয়ে না ফেলে ল্যাবরেটরিতে পাঠালে তা থেকে এভিডেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেই ক্রাইম সিন থেকেও অনেক কিছু পাওয়া যেতে পারে। যেমন ঘরের আসবাব, বিছানার চাদর, বালিশ বা অপরাধীদের ব্যবহৃত কিছু জিনিস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। সেগুলোও ডিএনএর সোর্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।’

এই প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘যথেষ্ট সন্তুষ্ট হওয়ার পর্যায়ে হয়ত আমরা নই। আমরা ধীরে ধীরে প্রশিক্ষিত হচ্ছি, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ ল্যাব প্রস্তুত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেমন জঙ্গিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে। আমরা এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘দেরিতে অভিযোগ আসলে আলামত হারিয়ে যাওয়াসহ ঘটনার তদন্ত ও প্রমাণে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি করে। সময় চলে গেলে ঘটনার গুরুত্ব যেমন বাড়ে অথবা কমে, তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হারিয়ে যায় বা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ না করা হলে তাদের পাওয়া যায় না, অনেক সময় তারা নিজেরাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বেশ দেরতে এলে প্রশ্ন তৈরি হয় কেন তারা দেরিতে এলো। হয়ত তার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিলো, হয়ত সে ঘটনা গুরুত্ব বুঝতে পারে নি বা কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্য নারীরা সামনে আসেন না নানা সামাজিক কারণে।’

মানবাধিকার কর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সকল জটিলতার পরও দেশের পুলিশ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাধ্য। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বলা নেই। যেকোনো সময় ভুক্তভোগী গিয়ে পুলিশের কাছে মামলা করতে চাইলে পুলিশ সেটা নিতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় যে দেরতে গেলে বিচার প্রার্থীকে তাকে শুরুতেই একটা হতাশা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তুমি দেরিতে আসছো তাতে সাক্ষী পাওয়া যাবে না এসব বলে। কিন্তু তদন্তকারীর কৃতিত্বটাই হলো সেটি প্রমাণ করা। দু’শ’ বছরের পুরনো নিয়মে আমরা বলে দেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসতে হবে বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হতে হবে। সেটা যদি কেউ না পারে তাহলে কি সে বিচার পাবে না?’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/মে ০৮, ২০১৭)