চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসা।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে দু’পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি(এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। যা বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে নগরবাসীর জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেছেন, ‘ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ সিস্টেম আলাদা করা না হলে হালদা ও কর্ণফুলী নদী দূষিত হয়ে মিঠা পানি সংকটে পড়বে নগরবাসী। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা আলাদা না থাকায় প্রতিদিন টনে-টনে বর্জ্য হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। জোয়ার-ভাটার নদী হওয়ায় এখনও তার প্রভাব না পড়লেও এক সময় এ দুটি নদী বুড়িগঙ্গার মত হয়ে পড়বে। সংকটে পড়তে হবে মিঠা পানির উৎস।’

এদিকে জলাবদ্ধতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হলেও নির্বাচনের পর কেউ এ নিয়ে বাস্তবসম্মত কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, অপচনশীল পলিথিন এবং খাল-নালা ভরাটের ফলে এ ধরনর জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার রোধ, ভরাট খাল-নালা উদ্ধারের পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা না গেলে চট্টগ্রাম নগরীতে ১২ মাসই এ সমস্যা থাকবে।

জলাবদ্ধতাকে চট্টগ্রামের এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিরসনে চায়নার সাথে ৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আ.জ.ম নাছির। এসময় জলাবদ্ধতা নিরসনে হাতে নেয়া ৫ হাজার কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মহানগরে জলাবদ্ধতার তিনটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নালা ও খাল বেদখল এবং নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার রোধে প্রশাসনিক ব্যর্থতা। ফলে অতিবৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি চাক্তাই খাল, ডোম খাল, হিজড়া খাল, নয়া মির্জা খাল, শীতল ঝর্ণা খাল, বামুননয়া হাট খাল, গুলজার খাল, বীর্জা খাল, ইছান্যা খাল, মাইট্টা খাল, লালদিয়ার চর খাল, ত্রিপুরা খাল, নাছির খাল, গয়না ছড়া খাল, কাট্টলী খাল, চশমা খাল দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রাণাধীন এ ১৭টি খাল এক শ্রেণির দখলদারদের কবলে পড়ে এখন নালায় পরিণত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামসহ ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/মে ১১, ২০১৭)