স্পিনিংয়ের ঋণে মূলধন সংগ্রহ করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল
তথ্য গোপন করে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। একই গ্রুপের অন্য কোম্পানির ঋণ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে দেখিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানিটি। বিনিয়োগকারীদের টাকায় অন্য কোম্পানির ঋণ পরিশোধ হলেও সম্পদ কমেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের।
কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহককে ঋণ দিলে তার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল স্টান্ডার্ড ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে দাবি করলেও ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্টে তার তথ্য পাওয়া যায়নি। প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের ২৩ কোটি টাকার ঋণ নিজ কোম্পানির নামে চালিয়ে দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করায় এর সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে স্টক এক্সচেঞ্জ। ঋণের তথ্য চাইলে স্টান্ডার্ড ব্যাংক প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের তথ্য দেয়। এতে করে নতুন করে সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ পুনরায় স্টান্ডার্ড ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তী সময়ে ভুল স্বীকার করে সংশোধিত তথ্য দেয় স্টান্ডার্ড ব্যাংক। যেখানে পূর্বের প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের স্থলে শুধু প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিখে দেওয়া হয়। বাকি সব তথ্য হুবহু একই রকম থাকে।
স্টান্ডার্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্টক এক্সচেঞ্জকে আরও জানানো হয়, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ২০১০ সালে প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের ঋণ নিজের নামে (টেকওভার) নিয়ে নেয়। কিন্তু ঋণ টেকওভারের ক্ষেত্রে প্যারমাউন্ট স্পিনিংয়ের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় করা হয়েছে তা প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে, পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে এরই মধ্যে ঋণ পারিশোধ করা হয়েছে বলে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য দিয়েছে প্যারামাউন্ট কর্তৃপক্ষ। এতে করে মূলত: ঋণ পরিশোধ হয়েছে প্যারামাউন্ট স্পিনিংয়ের আর সম্পদ কমেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের। অথচ বিনিয়োগকারীরা মূলধন বিনিয়োগ করেছেন প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের জন্য।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্যারামাউন্টের কোম্পানি সচিব মি. নুরুজ্জামান বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের যে ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা পূরোনো ঋণ। আর প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল সরাসরি ঋণ নিয়েছে।
তাহলে স্টান্ডার্ড ব্যাংক ওই ঋণকে টেকওভার বলেছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দ্রুত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন, ব্যাংক থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটাই ঠিক।
ঋণ টেকওভার হলে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সব দায় ও সম্পদ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধ হয়ে যাওয়ায় তা সিআইবি রিপোর্টে নেই বলে জানান মি. নূরুজ্জামান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কোনো ঋণ পরিশোধ হয়ে গেলেও তা সিআইবি রিপোর্টে থাকে।
প্যারামাউন্টের ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল অনেক আগে ঋণ টেকওভার করেছে। এ ছাড়া ওই তথ্য কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। যে কারণে তা প্রসপেক্টাসে সংযুক্ত করা হয়নি। তবে আইপিও প্রক্রিয়ার জন্য কোম্পানির ঋণ সংক্রান্ত সকল তথ্য যাচাই করা হয়েছে। ঋণ পরিশোধ হওয়ায় তা সিআইবি রিপোর্টে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, কোনো কোম্পানি যদি এ ধরনের জালিয়াতি করে থাকে তবে তার দায়ভার ইস্যু ম্যানেজারের। এক্ষেত্রে ওই ইস্যু ম্যানেজারের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
উল্লিখিত ঋণ জটিলতা সম্পর্কে জানতে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কোনো জবাব না পেয়ে সোমবার পুনরায় কমিশনে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান বিএসইসির মূখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।
উল্লেখ্য, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পুঁজিবাজার থেকে প্রিমিয়ামসহ ৮৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। যার মধ্য থেকে ৭৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ ও ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা চলতি মূলধন বাড়াতে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে প্রসপেক্টাসে। বাকি ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আইপিওতে খাতে ব্যয় করার জানানো হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরএ/ডব্লিউএন/এইচএসএম/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)