বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলনটি আমলযোগ্য
প্রায় প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরা সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এ সব কর্মসূচিতে সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ বছর করার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নানা কারণে শিক্ষা জীবন শেষ করতেই তাদের বয়সের একটি বড় সময় পার হয়ে যাওয়ায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সসীমা খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরির আবেদনই করতে পারছেন না।
অন্যদিকে, শিক্ষিত বলে সমাজে স্বীকৃত হওয়ায় এ সব যুবক-যুবতী সাধারণ কোনো কাজ বেছে নিতে পারছেন না। লেখাপড়া শিখতে গিয়ে জীবনের একটি বড় ‘কর্মকাল’ তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরির বয়সসীমা হারিয়ে তারা শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ান।
আমরা মনে করি, কর্মক্ষমতা এবং যোগ্যতা যাদের রয়েছে সরকারি চাকরির প্রান্তসীমায় পৌঁচ্ছানোর আগে যে কোনো বয়সে তাদের জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ অবারিত থাকা উচিত। এই দেশেই বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় এমন কি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা কোনো বাধা নয়। তাহলে তার চেয়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন ঔপনিবেশিক আমলের তৈরি এই নিয়ম বহাল রাখা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রয়োজন দেখিয়ে বিশেষ আদেশে বয়সসীমা ছাড় দিয়ে নিয়োগের উদাহরণও আমাদের দেশে রয়েছে, যাদের কর্মদক্ষতা পরবর্তী সময় জাতির সেবায় কাজে লেগেছে। কিন্তু নিয়োগের বর্তমান নিয়মানুযায়ী এ ধরনের অনেক যোগ্য লোকের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত থাকছে।
উল্লেখিত যুক্তি না টেনেও বলা যায়, যে দেশের সরকার বেশিরভাগ মানুষের কর্মসংস্থানের দায় নেয় না সে দেশে বয়সসীমা বেঁধে দিয়ে সরকারি চাকরির আবেদন করা থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত রাখা নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়।