লোকসানে ২ ব্যাংক
তালিকাভুক্ত ৬৩ শতাংশ ব্যাংকের ইপিএস বেড়েছে
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬৩ শতাংশ ব্যাংকের চলতি বছরের ১ম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের এ মুনাফা ২৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও ব্যাংকের এমন আর্থিক ফলাফল বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। অন্যদিকে, ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়া ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরও কমেছে সমানতালে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আগের বছরের তুলনায় ১৯টি বা ৬৩ শতাংশ ব্যাংকের ২০১৭ সালের ১ম প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ইপিএস বেড়েছে যমুনা ব্যাংকের। ব্যাংকটির ২৯০ শতাংশ ইপিএস বেড়েছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৯ শতাংশ বেড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। ১১৮ শতাংশ ইপিএস বেড়ে ৩য় স্থানে রয়েছে ওয়ান ব্যাংক।
এদিকে, আগের বছরের তুলনায় কমলেও সবচেয়ে বেশি ইপিএস হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আগের বছরের থেকে ১২ শতাংশ কমে ইপিএস হয়েছে ২.৯১ টাকা। এরপরে ব্র্যাক ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ বেড়ে ইপিএস হয়েছে ১.৬২ টাকা, ১১৮ শতাংশ বেড়ে ওয়ান ব্যাংকের ১.৩৫ টাকা, ৯ শতাংশ বেড়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের ১.৩৪ টাকা, ১৩ শতাংশ বেড়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের ১.১৫ টাকা ও ৮৩ শতাংশ বেড়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১.০৮ টাকা হয়েছে। ১ম প্রান্তিকে এই ৬ ব্যাংকের ইপিএস ১ টাকা বা তার বেশি হয়েছে।
অধিকাংশ ব্যাংকের ইপিএস বাড়লেও শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে বিপরীত। ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৬টির বা ৫৩ শতাংশ ব্যাংকের এ নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি খারাপ বা ঋণাত্মক নগদ প্রবাহ হয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটির নগদ প্রবাহ হয়েছে ঋণাত্মক ৩৫.৩০ টাকা। অপরদিকে, সবচেয়ে বেশি ৩০.৮০ টাকা নগদ প্রবাহ হয়েছে রূপালী ব্যাংকের।
নিম্নে ইপিএস বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা তুলে ধরা হলো। এক্ষেত্রে ১৫ মে তারিখের শেয়ার দর তুলে ধরা হয়েছে এবং ব্রাকেটে () থাকা হিসাবকে ঋণাত্মক বোঝানো হয়েছে।
ব্যাংকের নাম |
চলতি বছরের ১ম প্রান্তিকের ইপিএস |
আগের বছরের ১ম প্রান্তিকের ইপিএস |
বৃদ্ধির হার |
নগদ প্রবাহ |
৩১ মার্চ এনএভিপিএস |
শেয়ার দর |
যমুনা ব্যাংক |
০.৩৯ |
০.১০ |
২৯০% |
(৪.০৭) |
২৬.৫৮ |
১৮.৩ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক |
০.৪৩ |
০.১৬ |
১৬৯% |
০.৭৩ |
১৭.৮৮ |
১২.৪ |
ওয়ান ব্যাংক |
১.৩৫ |
০.৬২ |
১১৮% |
(৬.৩৫) |
২০.১৯ |
২১.৫ |
পূবালী ব্যাংক |
০.৭৬ |
০.৩৭ |
১০৫% |
৮.২৮ |
২৮.৫৯ |
২৩.১ |
ব্যাংক এশিয়া |
০.৪০ |
০.২১ |
৯০% |
(৬.২১) |
২১.৭৮ |
১৬.৮ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক |
১.০৮ |
০.৫৯ |
৮৩% |
৫.৮৪ |
২১.৫৭ |
১৬.৯ |
রূপালী ব্যাংক |
০.৪২ |
০.২৫ |
৬৮% |
৩০.৮০ |
৪৩.৯৮ |
২৯.৮ |
ব্র্যাক ব্যাংক |
১.৬২ |
০.৯৮ |
৬৫% |
৭.৯৮ |
৩২.৮৯ |
৭৩.৬ |
সাউথইস্ট ব্যাংক |
০.৯৬ |
০.৫৯ |
৬৩% |
১.১৯ |
৩০.২০ |
১৭.২ |
প্রাইম ব্যাংক |
০.৭৮ |
০.৫১ |
৫৩% |
(০.৩১) |
২৫.৩৫ |
২২.২ |
ঢাকা ব্যাংক |
০.৬০ |
০.৪৩ |
৪০% |
(১৩.০৮) |
২১.৯৭ |
১৮.৮ |
ন্যাশনাল ব্যাংক |
০.২৭ |
০.২১ |
২৯% |
০.৮৫ |
১৮.৬৭ |
১৩.৭ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক |
০.৫১ |
০.৪০ |
২৮% |
(২৩.৯৩) |
১৬.৩৫ |
১২.৫ |
শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক |
০.৫১ |
০.৩৮ |
২৫% |
১.৭৫ |
১৮.২১ |
১৫.১ |
ইসলামী ব্যাংক |
০.৬২ |
০.৫০ |
২৪% |
(৩.৮৮) |
৩০.৯৭ |
৩১.৬ |
ট্রাস্ট ব্যাংক |
১.১৫ |
১.০২ |
১৩% |
(৩৫.৩০) |
২৩.৮৭ |
২৪.১ |
এনসিসি ব্যাংক |
০.৩৮ |
০.৩৪ |
১২% |
২.১৮ |
১৯.১৪ |
১৪.৫ |
ইস্টার্ন ব্যাংক |
১.৩৪ |
১.২৩ |
৯% |
(৩.৮৭) |
৩০.৯৯ |
৩০.৮ |
আইএফআইসি ব্যাংক |
০.৫৬ |
০.৫২ |
৮% |
(৬.২২) |
২৫.৩৭ |
১৬.৪ |
চলতি বছরের ১ম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশের পরে ইপিএস বাড়লেও কিছু ব্যাংকের শেয়ার দর কমতে দেখা গেছে। তবে ইপিএস কমে আসা সব ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে। শেয়ার দর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়া ও সর্বোচ্চ হ্রাস পাওয়া এমন ৫টি করে ১০টি ব্যাংকের শেয়ার দরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, যমুনা ব্যাংকের মুনাফা ২৯০ শতাংশ বাড়লেও শেয়ার দর কমেছে ১.৬১ টাকা। ব্যাংকটির ইপিএস ঘোষণার সময়ের শেয়ার দর ১৮.৬ টাকা থেকে কমে ১৫ মে দাঁড়িয়েছে ১৮.৩ টাকায়। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়ার ৯০ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধির বিপরীতে শেয়ার দর ১৬.৯ টাকা থেকে ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৮ টাকায়। অন্যদিকে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর ১২.৩ টাকা থেকে ১ শতাংশ বেড়ে ১২.৪ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর ২১.২ টাকা থেকে ১ শতাংশ বেড়ে ২১.৫ টাকায় ও পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর ২২.৯ টাকা থেকে ১ শতাংশ বেড়ে ২৩.১ টাকা হয়েছে।
অপরদিকে, এক্সিম ব্যাংকের ৯৮৩ শতাংশ ইপিএস কমার বিপরীতে ব্যাংকটির শেয়ার দর কমেছে ২০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির ১ম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশের পরে শেয়ার দর ১৪ টাকা থেকে কমে ১৫ মে দাঁড়িয়েছে ১১.২ টাকায়। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার দর ১৭.৭ টাকা থেকে ৪ শতাংশ কমে ১৭ টাকায়, এবি ব্যাংকের ২১.৬ টাকা থেকে ১২ শতাংশ কমে ১৯.১ টাকায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ২০.৯ টাকা থেকে ১ শতাংশ কমে ২০.৬ টাকায় ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ১৭.৫ টাকা থেকে ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৯ টাকায়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ব্যাংকগুলো ২০১৬ সালের ব্যবসায় ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। আর চলতি বছরের যে ব্যবসায় তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নাই। এই খাতে এমন কিছু হয়নি যে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই ব্যাংকিং খাত নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মত কিছু নাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা তো হুজুগে বিনিয়োগ করে। যে কারণে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ার পরেও দাম কমে। বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করলে এমন হতো না।’
নিম্নে ইপিএস কমে আসা ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা তুলে ধরা হলো। এক্ষেত্রে ১৫ মে তারিখের শেয়ার দর তুলে ধরা হয়েছে এবং ব্রাকেটে () থাকা হিসাবকে ঋণাত্মক বোঝানো হয়েছে।
ব্যাংকের নাম |
চলতি বছরের ১ম প্রান্তিকের ইপিএস |
আগের বছরের ১ম প্রান্তিকের ইপিএস |
হ্রাসের হার |
নগদ প্রবাহ |
৩১ মার্চ এনএভিপিএস |
শেয়ার দর |
এক্সিম ব্যাংক |
(০.৫৩) |
০.০৬ |
(৯৮৩%) |
(০.২৩) |
১৮.২১ |
১১.২ |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক |
০.১০ |
০.৪২ |
(৭৬%) |
২.২৮ |
২৪.৫৭ |
১৭ |
এবি ব্যাংক |
০.৩৫ |
০.৯৬ |
(৬৪%) |
(১১.৬৩) |
৩৬.৪৫ |
১৯.১ |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক |
০.১০ |
০.২০ |
(৫০%) |
(৩.৩৬) |
১৯.৩৩ |
২০.৬ |
আল-আরাফাহ ব্যাংক |
০.৭১ |
০.৯৭ |
(২৭%) |
(২.২৫) |
২০.৪৭ |
১৬.৯ |
দি সিটি ব্যাংক |
০.৬৭ |
০.৭৯ |
(১৫%) |
৭.২৩ |
৩১.৭২ |
৩২ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক |
২.৯১ |
৩.২৯ |
(১২%) |
১৪.৮৫ |
৮৭.৯৬ |
৯৯.৪ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক |
০.৬৬ |
০.৭৩ |
(১০%) |
(১২.৩৮) |
২২.৪১ |
২৫.৮ |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক |
(০.১২) |
(০.১১) |
(৯%) |
(০.৪৬) |
(১৫.২৪) |
৪.৮ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক |
০.২০ |
০.২১ |
(৫%) |
১.৯৬ |
১৬.৮৮ |
১০.৬ |
উত্তরা ব্যাংক |
০.৭২ |
০.৭৪ |
(৩%) |
৪.০৬ |
৩৪.২৭ |
২২.৭ |
এ সময় এক্সিম ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লোকসানে পড়েছে। এরমধ্যে এক্সিম ব্যাংক আগের বছরের ১ম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ০.০৬ টাকা মুনাফা করলেও এ বছর ০.৫৩ টাকা লোকসান করেছে। আর আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ০.১১ টাকার লোকসান বেড়ে হয়েছে ০.১২ টাকা।
এদিকে, লোকসানের সঙ্গে সঙ্গে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি নিম্নমুখী হয়েছে এক্সিম ব্যাংক। আগের বছরের তুলনায় এ নিম্নমুখী বা ইপিএস কমার হার ৯৮৩ শতাংশ। এরপরে ৭৬ শতাংশ কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। ৬৪ শতাংশ কমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক।
শেয়ারপ্রতি মুনাফা অর্জন করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ইপিএস হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংক দুটির ইপিএস হয়েছে ০.১০ টাকা। এরপরে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ০.২০ টাকা, এবি ব্যাংকের ০.৩৫ টাকা, এনসিসি ব্যাংকের ০.৩৮ টাকা, যমুনা ব্যাংকের ০.৩৯ টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ০.৪০ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ০.৪২ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ০.৪৩ টাকা ইপিএস হয়েছে। ১ম প্রান্তিকে শুধুমাত্র এই ব্যাংকগুলোর ইপিএস ০.৫০ টাকার নিচে হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/মে ১৬, ২০১৭)