কুষ্টিয়া চিনিকলের ২৮ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়া চিনিকলের গুদামঘরে ২৮ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি খাবার অনুপযোগী।
নভেম্বরের শেষদিকে এ মৌসুমের আখ মাড়াই শুরু হওয়ার প্রস্তুতি চললেও কর্তৃপক্ষ বিশাল অংকের মজুদকৃত চিনি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। চিনি বিক্রি করতে না পারায় মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও মিলের বিভিন্ন খরচ পরিশোধ করতে পারছেন না। আবার এ মৌসুমে আখচাষীদের আখের মূল্য কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়েও বাড়তি চাপ রয়েছে কর্তৃপক্ষের উপর।
কুষ্টিয়া চিনিকল এ জেলার আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি মিলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ আখ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনির মধ্যে ৫৬২৫ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় মিলের গুদামে মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ২০১১-১২ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত ২৩৫০ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন চিনির মধ্যে ১২১২ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত এবং ২০১২-১৩ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত ৪৪১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চিনির মধ্যে ৪৬১৩ দশমিক ৭০ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রীত রয়েছে। মোট মজুদকৃত চিনির মূল্য ২৮ কোটি ১২ লাখ ৮৫ টাকা। দেশের সব চিনি বিক্রির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এককভাবে দায়িত্ব দিলে চিনিকলগুলোর চিনি বিক্রির পথ সুগম হবে।
মজুদকৃত চিনি বিক্রি জরুরি হয়ে পড়েছে। চিনি বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকটের মধ্যে পার করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক (স্টোর) আনিসুর রহমান জানান, চিনির গুদামঘর ২টি। যার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ৬৫০ মেট্রিক টন। চিনি মজুদ থাকায় একটিতে আর চিনি রাখার মতো পরিবেশ নেই। তবে অন্যটি সম্পুর্ণ ফাঁকা রয়েছে।’
সরেজমিনে মিলের গুদামে দিয়ে দেখা গেছে, ২০১১-১২ মাড়াই মৌসুমের উৎপাদিত চিনি খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চিনিভর্তি বস্তা থেকে রস বের হচ্ছে।
মিলের সিবিএ সভাপতি শেখ সুলতান আহমেদ জানান, মিলের চিনি বিক্রি হচ্ছে না সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে। চিনিশিল্পের জন্য সরকারের আন্তরিকতার অভাবের কারণেই আজ এ শিল্প সংকটের মুখে।
বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আক্কাস আলী জানান, চিনি শিল্প না বাঁচলে আমাদের দেশের আখচাষীরা আখ রোপণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই বাধ্য হয়ে আখচাষ বন্ধ করে দিতে হবে। এরই মধ্যে দেশে আখচাষ পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে। চাষীরা তামাক চাষ কমিয়ে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে কিন্তু উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিলের পাশাপাশি চাষীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা গেছে, মিলের উৎপাদিত চিনি নিতে মিলের নির্ধারিত ডিলাররা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। গত ২ বছরে কোনো ডিলারই চিনি মিল থেকে সংগ্রহ করেননি। নির্ধারিত সময়ের মধ্য নির্ধারিত পরিমাণ চিনি সংগ্রহ না করলে ডিলারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও মিল কর্তপক্ষ সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
(দিরিপোর্ট২৩৪/জেএইচজে/এমসি/নভেম্বর ০৭, ২০১৩)