দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দলগুলো নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করছে বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

উপজেলা নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হলেও প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া, একক প্রার্থী ঠিক করতে অন্যদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা এমনকি বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক দলগুলো জড়িত বলেও উল্লেখ করে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে নির্দলীয় বলা হলেও দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এটাকে যেভাবে প্রভাবিত করছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনের চুপ থাকাটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের এ সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে না তারা।’

জাতীয় নির্বাচনসহ সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে যথাযথ সহায়তা করছে না বলে অভিযোগ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক।

তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং তথ্য অধিকার আইনে নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি না। এতে নির্বাচনের আগে ভোটারদের কাছে এ সব তথ্য প্রকাশের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। শুধু উচ্চ আদালতের নির্দেশ বা তথ্য অধিকার আইনেই নয়; নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বিধি-বিধানেও এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে- যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের কাছে তার হলফনামার তথ্য প্রদান করেন, সম্ভব হলে ওইদিনই এ সব তথ্য ভোটারকে জানাতে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

বদিউল আলম বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে মোট ৯৭টি ও পরে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সব নির্বাচনে বড় ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ না থাকলেও কোথাও কোথাও বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীদের ওপর হামলা, নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ আসছে। এমনকি সরকারি দল সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থীকেও এ ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সব কর্মকাণ্ডে সরকার সমর্থক, পুলিশ ও প্রশাসনের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে তথ্য প্রাপ্তিতার ভিত্তিতে মোট ৫২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭৯ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। এ ছাড়া ৯১ জন এসএসসি পাস, এইচএসসি পাস ৯৭ জন, স্নাতক ১৫১ জন, স্নাতকোত্তর ৯৭ জন এবং ৬ জন প্রার্থী তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

সংস্থাটি আরও জানায়, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফাতেও ব্যবসায়ীদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ২৮৯ জনের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে ব্যবসা, কৃষিকে পেশা দেখিয়েছেন ১০৬ জন, চাকরি ৪৬ জন, আইনজীবী ৩৬ জন, গৃহিণী একজন, অন্যান্য ২০ জন এবং ২৩ জন প্রার্থী তাদের পেশার কথা উল্লেখ করেননি।

সুজনের দেওয়া তথ্যমতে, ৫২১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বর্তমানে ১২৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। অতীতে মামলা ছিল এমন প্রার্থীর সংখ্যা ১৭৭ জন এবং উভয় সময়ে মামলা রয়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৫৭ জন।

আয়ের বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ জন প্রার্থী ও তাদের নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় এক কোটি টাকার ওপরে, ৫০ লাখ থেকে এক কোটির মধ্যে বাৎসরিক আয় ৫ জন প্রার্থীর, ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে বাৎসরিক আয় ১৫ জন প্রার্থীর, দুই লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম বাৎসরিক আয় ১৫৫ জন প্রার্থীর।

জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাটি আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

সংস্থাটির মতে, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন চলছে। এর ফলে যাদের টাকা আছে তারা সহজেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। টাকার খেলার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে যাচ্ছে। অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাকে পুঁজি বিনিয়োগের মতো করে করছেন। এতে করে নির্বাচিত হওয়ার পর সকল ব্যয় লাভসহ কয়েকগুণ বেশি উঠিয়ে নেওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়, যার ফলে দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুশাসনের ঘাটতি দেখা দেয়।

বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাসা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এসকে/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)