দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অবশেষে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ মে) ব্যাংকটির ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শেষে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান আরাস্ত খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। এখন থেকে একজনই ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন আর তিনি হলেন আল রাজি গ্রুপের প্রতিনিধি ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-রাজি।’

এদিকে বৈঠকে মো. আব্দুল মাবুদকে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম মোহাম্মদকে আফজালকে। তবে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম ও মো. আব্দুল মাবুদ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকবেন।

রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত এজিএম’এ দুজনই অনুপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে-এমন দাবি করে গত ১১ মে অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ব্যাংকটি পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতে চলে যাচ্ছে বলেও স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে ১৮ মে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক পারভেজের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান জানান।

তিনি বলেন, অধ্যাপক পারভেজ চাইলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। তবে তার পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোন চাপ নেই।

সংবাদ সম্মেলনের পর অধ্যাপক পারভেজ আলমসহ ৬ পরিচালকের স্বাক্ষর করা একটি যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হয়। বিবৃতিতে অধ্যাপক পারভেজ দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলে অন্যরাও পদত্যাগ করবেন। ব্যাংকের বেশিরভাগ পরিচালক তার সঙ্গে রয়েছেন বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।

এমনই অবস্থায় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অধ্যাপক পারভেজ আলমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পারভেজ আলম দাবি করেন, ‘ভাড়া করা এজিএম পার্টির লোক, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শেয়ারহোল্ডার, শেয়ারহোল্ডার নন-এমন লোকজন ভাড়া করে এনে বার্ষিক সাধারণ সভায় কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়েছে’।

এজিএমের নামে নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

এদিকে সকালে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের এজিএম’এ ২০১৬ সালের জন্য ঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের বিষয়টি অনুমোদিত হয়।

সৌদি আরবভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ইসলামী ব্যাংক থেকে তাদের অধিকাংশ বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করে। আইডিবির প্রতিনিধি হিসেবে থাকা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আরিফ সুলেমান জানান, আইডিবির হাতে থাকা সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২ দশমিক ১ শতাংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। ওইদিন অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ২৪০তম সভায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক ও এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নান স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পরে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ ডিএমডি মাহবুবুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমকে/মে ২৩, ২০১৭)