চট্টগ্রামে তিন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ভিওআইপি ব্যবসা
বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : নগরীতে আবারও জমজমাটভাবে চলছে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসা। চট্টগ্রামে রয়েছে ভিওআইপি ব্যবসায়ীর তিনটি সিন্ডিকেট। এ সব সিন্ডিকেট বিটিআরসি কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা ভিওআইপির টাকা লেনদেন করে আরেক অবৈধ লেনদেন হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে তাদের লেনদেনকৃত টাকার রাজস্বও সরকার পায় না বলে জানিয়েছে র্যাব-পুলিশের একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর অপারেশন কর্মকর্তা মেজর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘র্যাব ভিওআইপি ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালায়। কিন্তু র্যাব নগরীর আইনশৃঙ্খলাসহ অন্যান্য দিকে মনোযোগ দেওয়ায় ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে এ সব বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
কয়েক প্রবাসী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি ভিওআইপির মাধ্যমে কল করেন। যে সব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ভিওআইপি কল আসছে সেগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ওমান, দুবাই, কাতার, মালয়েশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার জানান, সৌদি আরব থেকে আসা হাজার হাজার কলের কয়েকটি হলো- ০১৫৫৯৮৫৮৭৭/০১৫৫১৯০১৮৮৮/০১৫৫৯২৫১০৫৪/০১৫৬১০৩৬১৬৭/১৫৬১০৩৬১৭১/০১৫৫৯২৫১০৩২। ভিওআইপি কলগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিকম অপারেটর কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে আসে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এয়ারটেল। এমনিতে এয়ারটেল অপারেটরের বিরুদ্ধে রয়েছে হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ। এরপর রয়েছে বাংলালিংক ও রবি। তবে গ্রামীণফোন অপারেটর কোম্পানির ভিওআইপি কল পরিমাণে কম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামের নানা স্থানে অবৈধ ভিওআইপির মালামাল আটক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে। প্রতিটি ঘটনায় মামলাও হয়। কিন্তু সে সব মামলার কোনোটিতে তদন্ত হয়েছে বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে- এমন রেকর্ড নেই। বরং জব্দ করা মালামাল বা যন্ত্রপাতি কোথায় যাচ্ছে, সে হিসাব বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানাতে পারেনি। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে ৭ হাজারের মতো অবৈধ ভিওআইপির মামলা রয়েছে। যদিও সরাসরি অবৈধ ভিওআইপি কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা দেড় হাজারের মতো।
সূত্র মতে, চট্টগ্রাম নগরীর যে সব আবাসিক এলাকায় সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনাগোনা কম, সে সব এলাকায় সার্ভার বসিয়ে ভিওআইপি ব্যবসা চালানো হচ্ছে। নগরীর চান্দগাঁও, আবাসিক আগ্রাবাদ, পাঁচলাইশ, সুগন্ধা, খুলশী এলাকায় এ সব ব্যবসায়ীরা বেশি তৎপর। যে সব এলাকায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানির টাওয়ার সহজলভ্য সে সব এলাকায় ভিওআইপি ব্যবসা অনেক সহজ। এ অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরা এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করতে পারছে না। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সরঞ্জামসহ লোকজনকে গ্রেফতার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
আইটি বিশেষজ্ঞ আরমান ফরহাদ জানান, বিটিআরসির কর্মকর্তারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে এ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বিটিআরসির কর্মকর্তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। কীভাবে হাজার হাজার টেলিটকের সিম ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের হাতে গেল, তা তদন্ত করে বের করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
বিটিআরসির চট্টগ্রামের দায়িত্বপাপ্ত কর্মকর্তা আদনান আহাম্মেদ বলেন, চট্টগ্রামে ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
ভিওআইপি কল টেলিটকে বেশি আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষ কোনো ফোন থেকে বেশি ভিওআইপি কল হচ্ছে- এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
(দ্য রিপোর্ট/কেএইচসি/এফএস/এএস/এইচএসএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)