দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমতের(গুনাহ মাফের) মাস রমজানে নাজিল হয়েছে মুমিনের জীবন বিধান আল কুরআল। তাই সঠিকভাবে সিয়াম পালনের পাশাপাশি যথার্থ বুঝে বেশি বেশি কুরআন পাঠ, সংযম পালন, সাধ্যানুযায়ী অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একমাস তারাবির নামাজ আদায় করা মুমিনের জন্য অত্যন্ত ফজিলতের কাজ।

তারাবি আরবি শব্দটি ‘তারবিহাতুন’ মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ আরাম করা, বিশ্রাম নেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতি চার রাকাত অন্তর বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়, তাই এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়।

তারাবির নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। এর গুরুত্ব অসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের প্রতি রাতে কিয়াম আদায় করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ আল-বোখারি, হাদিস : ১৯০১, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯,)

মাহে রমজান যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য মহিমাম্বিত, তার মধ্যে অন্যতম তারাবির নামাজ। তারাবির নামাজ মুসলমানদের ওপর সারা বছরের মধ্যে শুধুই রমজান মাসের জন্যে সুন্নত বিধান হিসেবে নির্ধারিত।

যেহেতু রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য কোনো সময়ে তারাবির নামাজ আদায় করার সুযোগ নেই তাই বার্ষিক ইবাদত হিসেবে এর গুরুত্ব অন্যান্য সুন্নত নামাজ অপেক্ষা বেশি। রাসুলে করিম (সা.) তারাবির নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্বসহ আদায় করতেন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজের ব্যাপারে সাহাবীদের উৎসাহিত করতেন কিন্তু তিনি তাঁদেরকে দৃঢ়তার সঙ্গে আদেশ করতেন না। তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে কিয়াম করবে অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০০৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯, মুআত্তা ইমাম মালেক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৫৬ , হাদিস : ৩৭৬)

সুন্নাতে মুআক্কাদাহ হিসেবে এর গুরুত্ব মোটেও কম নয়। বিজ্ঞ আলেমগণ সুন্নাতে মুআক্কাদাহকে ওয়াজিবের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ তারাবির নামাজ বর্জন করলে অবশ্যই গুনাহ হবে। হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের (রা.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রাতের বেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের নিকট এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা ফরজ করে দেওয়া হয়। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ৯২৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬১,)

হাদিসের তথ্যমতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনদিন মসজিদে নববীতে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। অতঃপর রাসুলের যুগে এবং হজরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে এবং হজরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতের প্রথম দিকে মুসলমানরা একাকী অথবা খণ্ড খণ্ড ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। অবশেষে হজরত ওমর (রা.) হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.)কে ইমাম নির্ধারণ করে সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায়ের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস : ২০১০)।

মাহে রমজানে রোজা পালনের সাথে সাথে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল তারাবির নামাজ যেন আমরা সকলে সঠিক ভাবে পালন করে আল্লাহ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, মহান রাব্বুল আমিন আমাদেরকে সে তাওফিক দান করুন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এনআই/জুন ০৩, ২০১৭)