মিতু হত্যা : একবছরেও চিহ্নিত হয়নি খুনি
চট্টগ্রাম অফিস : সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে তার স্কুল পড়ুয়া ছেলের সামনে কার নির্দেশে এবং কেন হত্যা করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর এক বছর তদন্তের পরও দিতে পারেনি পুলিশ।
এ আলোচিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান বলছেন, তাদের তদন্ত চলছে এবং ‘ভালো অগ্রগতি’ আছে।
এ মামলায় কিছু জায়গায় জট ছাড়ানো এখনও সম্ভব হয়নি। এ অবস্থাতেই জুলাইয়ের মধ্যে আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে চান বলে দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।
গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ওই হত্যাকাণ্ডের পর এক মাসের মধ্যে ছয়জন গ্রেফতার করে পুলিশ। দুইজন পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। কিন্তু যাকে পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ বলছে, সেই কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা এবং ‘হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া’ কালুর হদিস গত এক বছরেও মেলেনি। তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস।’
মুছা ও কালু বাদে সব আসামি গ্রেফতারের তথ্য তুলে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেটুকু ব্যর্থতা আছে তা উৎরে ওঠার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে মুছাকে পাওয়াটা আমাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। এ জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
‘বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, খুব বেশিদিন অপেক্ষা করাটা সমীচীন হবে না। যেহেতু চার্জশীট দিতে হবে, আমরা চাচ্ছি জুলাই মাসের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করতে।’
কিন্তু তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন আঙুল তুলেছেন জামাতা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের দিকে।
বাবুলের অন্য দুই নারীর সঙ্গে সম্পর্কের যে অভিযোগ মিতুর পরিবার থেকে এখন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কমিশনার ইকবাল বাহার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এমন যে কোনো কর্মকাণ্ড, যেটি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে নিয়ে আসব।’
তবে মিতু হত্যার তদন্তে এখনও বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান ইকবাল বাহার।
গত বছরের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসির কাছে ওআর নিজাম সড়কে নিজ সন্তনের সামনেই গুলি ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে খুন করা হয় পুলিশের তৎকালীন এএসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। ঘটনার পর খুনিদের তিনজন একটি মোটরসাইকেলে করে এবং অন্যরা হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। শুরুতে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিকানার সূত্র ধরে ২০ দিনের মাথায় পুলিশ রাঙ্গুনিয়া থেকে ওয়াসিম, আনোয়ার ও শাহজাহানকে গ্রেফতার করে।
তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে আদালতে জবানবন্দি দেয় এবং জড়িত অন্যদের নাম উল্লেখ করে। এ ঘটনায় জড়িত নুরুন্নবী ও রাশেদ রাঙ্গুনিয়ার রাণীরহাট এলাকায় ইটের ভাটায় পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি পিস্তল নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে অস্ত্রের মালিক ও যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হক ভোলা এবং তার সহযোগী মনির হোসেনকে। মনির জামিনে বের হলেও ভোলা এখনো কারাগারে রয়েছে। অস্ত্রটি মিতু হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত হওয়ার ব্যাপারে ভোলা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এনআই/জুন ০৫, ২০১৭)