দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ‘ভাগিয়ে’ দেওয়ার প্রেক্ষিতে আদালত কক্ষে আটকিয়ে রাখার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনস্থ ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের সামনে অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আমার দীর্ঘ ৫০ বছরের ওকালতি জীবনে এইরকম ঘটনা আমাকে আগে কখনো সম্মুখীন হতে হয় নাই।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৬ জুন এনেক্স কোর্ট-৭ এ আগাম জামিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে যে ঘটনা ঘটেছে তা বিভিন্ন পত্রিকায় বিকৃতভাবে প্রকাশ করায় আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ওই দিনের ঘটনা উল্লেখ করে বাসেত মজুমদার বলেন, জুনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম আমাকে একটি আগাম জামিন শুনানির জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করে। শেষ পর্যন্ত তার অনুরোধে এই মামলাটি শুনানি করি। আসামির বিরুদ্ধে ৩২৬/৩০৭ ধারাসহ অন্যান্য ধারায় অপরাধ ছিল। বিজ্ঞ বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী এবং বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ শুনানিকালে বলেন, অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর, তাকে আগাম জামিন দেব না। তাকে জেলে পাঠিয়ে দিব এবং পুলিশকে বললেন ব্যবস্থা করার জন্য। আমি মক্কেলের পক্ষে বিনয়ের সাথে আবেদন করলাম যে, দয়া করে এই রোজার মাসে তাকে ক্ষমা করে দেন। এ সময় কোর্টের সাথে কিছু কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে আদালতের কথাবার্তা আমার নিকট প্রতীয়মান হল যে, কোর্ট বোধ হয় তাকে ক্ষমা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন ধরে আমি অনুভব করছি যে, আমার কথা শুনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। তাই কোর্ট হইতে বের হওয়ার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসায় আমি বলেছি, মনে হয় কোর্ট বিষয়টি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই বলিয়া আমি অন্য কোর্টে চলে যাই। পরবর্তীতে আমাকে সংবাদ দেওয়া হল ওই কোর্টে আসার জন্য। সে অনুযায়ী কোর্টে আসলে বিচারক আমাকে বলেন, আমি তো ওকে ছাড়ি নাই। আপনি তাকে ছাড়তে বললেন কেন? আমি বললাম যা-হোক বোধহয় আমার হয়তো শুনতে অসুবিধা হয়েছে।

সেদিনের পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, এ পর্যায়ে বিচারক আমাকে আদেশ দিলেন জুনিয়রকে নিয়ে আসার জন্য। পরবর্তীতে জুনিয়রকে খবর দিয়ে নিয়ে আসলাম। বিচারক তাকে আদেশ দিলেন মক্কেলকে নিয়ে আসার জন্য এবং জুনিয়র কিছুক্ষণ পরে মক্কেলকে নিয়ে আসলেন। মাননীয় আদালত আসামিকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। উপরের বর্ণিত ঘটনা বিকৃতভাবে পত্র-পত্রিকায় উপস্থাপন করার জন্য আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।

এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনসহ বাসেত মজুমদারের জুনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পর আদালত পুলিশকে বিভ্রান্ত করে ছাড়িয়ে নেয়ায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারকে এজলাশ কক্ষে আটকে থাকতে হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। পরে আসামিকে ডেকে এনে পুনরায় পুলিশের জিম্মায় দিলে ছাড়া পান বাসেত মুজুমদার। এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই সংবাদটি ‘আসামি ভাগিয়ে বিপাকে বাসেত মজুমদার’ শিরোনামে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমেও প্রকাশিত হয়েছিল।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এআরই/জুন ০৮, ২০১৭)