কিছু কিছু দূতাবাস নিয়ে মতিয়ার প্রশ্ন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘কিছু কিছু দূতাবাসকে নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগে। আমি যখন দেখি তারা কোনো জায়গায় গিয়ে বৈঠক করে, মাদ্রাসায় গিয়ে বৈঠক করে। যখন তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে তখন আমার মনে পড়ে যায়, হাসে ডিম পাড়ে, গুইসাপ না না করে, আসলে ডিম খাওয়ার কুয়ারা করে।’
দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মঙ্গলবার ৩০০ বিধিতে এক বিবৃতিতে কৃষি মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এ সব বিদেশি শক্তি জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে আমাদের সুবচন শোনায়। কিন্তু তারা এ সব জঙ্গি সংগঠনকে মদদ দেয়, আবার এই জঙ্গিরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় এলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অভাবও দেখি না।’
সম্প্রতি আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির অডিও বার্তা ও পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জঙ্গি হামলায় পুলিশ নিহত ও জেএমবি সদস্যদের ছিনিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আমরা কিছু কথা বলি। আমাদের কথায় তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরাই (আওয়ামী লীগ) নাকি শুধু বলি বিএনপির আমলে বাংলাদেশে জাওয়াহিরির আগমন সম্পর্কে, আর কেউ নাকি বলে না বা জাওয়াহিরির আগমন প্রসঙ্গে কেউ কিছু প্রকাশও করেনি।’
এ সময় টাইম ম্যাগাজিনের উদ্বৃতি দিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘২০০২ সালে ২০ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনে এলেক্স প্যারি একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন ২০০১ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ১৫০ জন আফগান তালেবান ও আল কায়েদা জঙ্গি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তালেবান শীর্ষ নেতা ফজলে করিম ভারতের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে তিনি স্বীকার করেন ২১ ডিসেম্বর আরও একশ’ তালেবান ও আল কায়েদা জঙ্গি চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। এ রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়, ওই সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দূতাবাসের বরাত দিয়ে লিখেছে, লাদেনের সেকেন্ড ম্যান মিসরীয় নাগরিক জাওয়াহিরি চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং এখানে কয়েক মাস থাকেন। ধারণা করা হয় জাওয়াহিরি মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং একজন মৌলবাদী নেতার বাড়িতে অবস্থান করেন। তবে বাংলাদেশ ত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত নয়।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘টাইম রিপোর্টে আরও বলা হয়, ডিজিএফআই’র একটি সূত্র জানিয়েছে আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি রহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বার্মা দিয়ে চলে যান। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থান আছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হলে তারা রাগান্বিত হয়। যেহেতু ২০০১ সালে অক্টোবর মাসের নির্বাচনে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসেন এবং তার জোটের দুটি দল তালেবানদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একটি দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে তালেবান আল কায়েদার সম্পর্ক রয়েছে। পত্রিকাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজে দুই বার অস্বীকার করলেও তার প্রশাসন সরকারের মধ্যে তালেবান ও আল কায়েদা সদস্য থাকার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানও উদ্বেগ প্রকাশ করে টাইমকে বলেন, দলের মধ্যে এরা থাকলে (তালেবান) কম ক্ষতিকর। কারণ তারা দলের ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকবে।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বিদেশি থিংক ট্যাংকের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে ছাত্রশিবির বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন যারা তালেবান ও আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত। এই ছাত্রশিবিরকে ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রধন তারেক রহমান বলেছিলেন, এই ছাত্রশিবির এক মায়ের পেটের দুই ভাই। তাহলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী তাদের জননী।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জেএমবি শীর্ষ সন্ত্রাসী বাংলা ভাই তারেককে মামা বলে ডাকতেন। বাংলা ভাইকে তারেক রহমানের মদদের ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী। এ ছাড়া খালেদার পূর্ণ সমর্থন ছিল বাংলা ভাই ও শায়েখ আবদুর রহমানের প্রতি- জানান হয় রাষ্ট্রদূতকে। আজ কী অপূর্ব মিল, যখন প্রিজন ভ্যানে আক্রমণ করে পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করা হল, ছিনিয়ে নেওয়া হলো জেএমবি জঙ্গিদের। এরপরে একজন জঙ্গি এনকাউন্টারে নিহত হলো তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বললেন, কিছু জানার আগেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু একজন পুলিশ যে নিহত হয়েছে সে ব্যাপারে তাদের (বিএনপি) কোনো কথা নেই। তারা আসলে এ জঙ্গিদের মদদ দিয়ে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে, তাদের মাধ্যমে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। তাদের এ ব্যাপারে কোনো লজ্জাবোধ নেই, রাগঢাক নেই। এটাও জানা আছে রাজশাহীর এসপির মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে বাংলা ভাইকে ট্রাক মিছিল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, তালেবান ও আল কায়েদার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নতুন কিছু না।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি মির্জা ফখরুল ইসলামকে সজ্জন বলে জানি। উনি শিক্ষক ছিলেন, পড়ালেখা করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তার বিবৃতি দেখে ও পড়ে আমার মনে হয়েছে ইদানিং এবং তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় টাইম ম্যাগাজিনের মতো পত্র-পত্রিকা তিনি পড়তেন না। তাই হয়ত বলছেন তাদের সময়ে কোনো তালেবান, আল কায়েদা বাংলাদেশে আসেনি। আমি তাকে বলব, আপনি পড়ালেখা করুন, জানুন তারপর কথা বলুন। পড়ালেখার চর্চাটা চালিয়ে যান।’
(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এনডিএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)