তারেক সালমান, দ্য রিপোর্ট : ভবিষ্যতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে। একই সঙ্গে তাদের মেধাবী, সবার কাছে প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য চরিত্রের অধিকারী হতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির প্রধান অভিভাবক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, নবীন শিক্ষার্থী যারা ছাত্রদল করতে চায় তাদের সকলের নাম, পরিচয় তালিকাভুক্ত করা হবে। তাদের আদর্শভিত্তিক শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বিবাহিত ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যারা বিয়ে করেছ, সংসার করছ; কেন এখনও ছাত্রদল কর? লেখাপড়া শেষ করে কেন তোমরা চাকরি করছ না। তোমাদের ক্যারিয়ারের কী হবে? বাবা-মা আর কতদিন তোমাদের টাকা-পয়সা দেবে?

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রদের (ছাত্রদল কর্মী) সঙ্গে এক অনির্ধারিত মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া এ সব কথা বলেন।

প্রথমে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কমিটির নেতাদের সঙ্গে তিনি দীর্ঘ দুই ঘণ্টারও বেশি সময় মতবিনিময় করেন। এরপর রাত সাড়ে ১২টার পর কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রদলের কর্মীদের (যারা ঢাবির কার্ডধারী নিয়মিত ছাত্র) সঙ্গেও তিনি অনির্ধারিত মতবিনিময় করেন।

খালেদা জিয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে ছাত্রদল গঠন করেছিলেন, তার একটা আর্দশ ও ঐতিহ্য আছে। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ছাত্রদল জীবনবাজি রেখেছে। কাজেই নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতার মোহে সেই ঐতিহ্য বিনষ্ট করা যাবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমি নিজে উপস্থিত থেকে তোমাদের প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচিত করব।

খালেদা জিয়া আরও বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারাগার থেকে বের হয়ে হলে পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। শিগগিরই রানিং স্টুডেন্টদের দিয়ে সেন্ট্রাল, ঢাবি কমিটি ও ঢাবির সব হল কমিটি করে দেওয়া হবে। যারা নিয়মিত ও বৈধ ছাত্র তারাই নেতৃত্ব পাবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ক্যাম্পাস, হোস্টেল শাখার দায়িত্ব পালনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে নতুন কমিটি দিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করারও অঙ্গীকার করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখার বৈধ ছাত্র ওয়াহিদুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ম্যাডাম ঢাবির বৈধ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আমাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। আমরা আমাদের সব অভিযোগ তার কাছে বলেছি।’

ওয়াহিদ বলেন, ‘ম্যাডাম স্পষ্ট করে বলেছেন, ভবিষ্যতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব কোনোভাবেই কোনো বিবাহিত ছাত্রের হাতে দেওয়া হবে না। একমাত্র অবিবাহিত, নিয়মিত ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কার্ডধারী ছাত্ররাই ছাত্রদলের নেতৃত্ব পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের কাছ থেকে নিয়মিত ছাত্রদের একটি তালিকাও নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগে এ ধরনের কোনো তালিকা আমাকে দেওয়া হয়নি। আশা করি, তোমরা তোমাদের সম্পর্কে সত্য তথ্য দেবে। তা হলেই ছাত্রদল আরও ভালো সংগঠন হবে।’

ওয়াহিদ বলেন, নিয়মিত ছাত্র যারা গতকাল (সোমবার) ম্যাডামের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পায়নি, আজ (মঙ্গলবার) রাতে তিনি আবারও তাদের ডেকেছেন। আজ তিনি সাধারণ ছাত্রদের বক্তব্য শুনবেন।

এদিকে ঢাবি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদল নেতাকর্মীরা নিয়মিত ছাত্রদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার হঠাৎ এ ধরনের অনির্ধারিত বৈঠকে বিস্মিত হয়েছেন। অনেকে আবার আশঙ্কা ও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘হঠাৎ হলেও এ পদক্ষেপের পেছনে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা তা দেখার বিষয়।’

নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য রিপোর্টকে এক ঢাবি ছাত্রদল কর্মী বলেন, আমরা ঢাবির নিয়মিত ছাত্র ও দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে গত রাতে এমন অনেকেই ম্যাডামের সামনে বক্তব্য রেখেছেন, যাদের আগে কোনো দিন দেখিনি। কোনো মিছিল-মিটিংয়েও দেখিনি। এমন অনেকেই গতকাল ম্যাডামের সামনে বক্তব্য রেখেছেন। অথচ আমরা বক্তব্য রাখার সুযোগ পাইনি।

অপর ছাত্রদল কর্মী বলেন, ‘এই প্রথম আমরা ম্যাডামের এত কাছাকাছি গেলাম। এর আগে উনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমরা অনেকেই অনভিজ্ঞতার কারণে কীভাবে কথা বলতে হবে, তা বুঝতে পারিনি। এ জন্য অনেকের বক্তব্যে মনে হয়েছে, তারা ম্যাডামকে উপদেশ দিচ্ছেন।

‘দেরিতে হলেও ম্যাডামের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। তারা খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যদিও ম্যাডাম কিছু মনে করেননি। চুপচাপ আমাদের বক্তব্য শুনেছেন।’

সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএআর/সা/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)