হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে ফের ১৪২ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের বাণিজ্যিক অডিটে এ দুর্নীতি বেরিয়ে আসে। অস্তিত্বহীন প্রকল্প, চুক্তিপত্র ছাড়াই মঞ্জুরির শর্ত ভেঙে বিদেশি নাগরিককে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে ১০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর থেকে সোনালী ব্যাংকের এ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগে পাঠানো হয়। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দুদক তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে। কমিশন সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক জানায়, অপর্যাপ্ত প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ ইস্যু, জামানতবিহীন প্রকল্পে ঋণ প্রদান, অস্তিত্বহীন প্রকল্পে ঋণ দেওয়া, চুক্তিপত্র ছাড়াই বিদেশি নাগরিককে ঋণ দেওয়া ও মঞ্জুরি শর্ত না মেনে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে এ অনিয়মগুলো করা হয়েছে। এ সব ঘটনায় ব্যাংকের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে আইনি ব্যবস্থা এবং গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করে অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমাকৃত ওই প্রতিবেদন অনুসারে, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে জয়েন্ট ভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্ট না নিয়ে এক বিদেশি নাগরিকের নামে ৪১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৯১ টাকার ঋণ প্রদান করা হয়। জামানতবিহীন একটি প্রকল্পের নামে বিদেশি ওই নাগরিক সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নেয়। পরে কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়লে বিদেশি ওই নাগরিক লাপাত্তা হয়। ফলে এর দায় পুরো ব্যাংকের ওপর এসে পড়ে। নিয়ম অনুসারে জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার সময় চুক্তিনামা অবশ্যই থাকতে হয়। কিন্তু ব্যাংক তা অনুসরণ করেনি।

কনসোর্টিয়াম লোন অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী, শর্ত অনুসরণ না করে একই শাখা হতে ওয়ান গ্রুপ নামের একটি কোম্পানিকে ৬৩ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়। এতে ব্যাংকের অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টি হয়। অডিট বিভাগ দেখতে পায়, ওয়ান গ্রুপ বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলেও তার জামানত খুবই অপ্রতুল। ফলে ব্যাংকের পুরো ঋণটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে শনাক্ত করে অডিট বিভাগ। এ ব্যাপারে ওয়ান গ্রুপের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করে অর্থ উদ্ধার করে এর জবাব অডিট বিভাগকে জানাতে বলা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অডিটে উল্লেখ করা হয়।

অডিট প্রতিবেদন অনুসারে, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে ১৩ কোটি টাকার একটি ঋণ মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়েছে। অবশ্য ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। ঋণ নেওয়ার পর কোম্পানি পণ্য উৎপাদন যেতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের অধীনে জামানত নামমাত্র থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অর্থ আদায় করতে পারছে না।

অপর ঘটনায় দেখা গেছে, একই শাখা থেকে অস্তিত্বহীন প্রকল্পের নামে পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ২৬ হাজার ২৯৪ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেসার্স প্রিটেক্স (প্রাইভেট) লিমিটেড। বর্তমান ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই অর্থ পাওয়া এবং আদায় করা পুরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অপর ঘটনায় নীতিমালার শর্ত ভেঙে ঋণের সুদ মওকুফ করার অভিযোগ আনা হয়। পাশাপাশি ঋণের আসল টাকা সুদবিহীন ব্লকে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তা অনিয়ম করে প্রায় সাত কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি করেছেন।

অপর আরেকটি ঘটনায় নামমাত্র সহায়ক জামানতের বিপরীতে অনিয়মিতভাবে একটি প্রকল্পে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়। পরে ওই প্রকল্পের অধীনে রফতানি ব্যর্থতায় ফোর্স লোন সৃষ্টি করা হয়। এ ছাড়া শ্রেণীকৃত পিএডি লোন হিসাবকে এলটিআর হিসেবে স্থানান্তর করে পুনর্তফসিল করার পরও প্রায় চার কোটি টাকা ঋণ আদায়ে ব্যর্থতায় ব্যাংকের এ টাকা ক্ষতি হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এমএআর/সা/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)