মুশফিকের ক্ষোভের জবাব ফারুক আহমেদের
স্পোর্টস এডিটর, দ্য রিপোর্ট : হুট করেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন উত্তপ্ত; ধোঁয়া উঠছে ক্রিকেট দলে। বনিবনা হচ্ছে না টিম নির্বাচক-কোচ-অধিনায়কের। অনেকটা থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার যোগাড়। চতুর কোচ একটু রক্ষণাত্মক খেলে থাকছেন বাইশ গজের বাইরে। তবে প্রধান নির্বাচক-অধিনায়ক ব্যাটে-বলে সমানতালে লড়ছেন। দলের ভেতরের টানাপোড়েনের কথা জানিয়ে প্রথম বোমা ফাটিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। আর মুশফিকের ব্যাটিংয়ের জবাবে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ নেমে পড়েছেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। তিনিও সমান্তরাল ব্যাটিং চালিয়েছেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে নিজের কর্মই সঠিক প্রমাণের প্রচেষ্টা করছেন মঙ্গলবার।
ঘটনা যখন মুখোমুখি তখন সর্বশেষ সিরিজে শ্রীলঙ্কায় নাস্তানাবুদ; জিততে জিততে হেরে যাওয়ার নেপথ্যে কারণ রয়েছে কিনা; ওঠে আসছে সে সব প্রশ্নও। অথচ সম্প্রতি বাংলাদেশের ওয়ানডে থেকে শুরু করে টেস্ট পারফরমেন্স ছিল চোখে পড়ার মত। ক্রিকেটের সেই ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ নেমে এসেছে তলানিতে। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘটনার কথা কেউ স্বীকার করেনি। বিষয়টি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে আলোচনা হচ্ছে। অচিরেই তা কাগজে-কলমে এসে পড়লেও অবাক হওয়ার থাকছে না।
মুশফিকুর রহিম ২৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘দল নির্বাচনে তার মতামত নেওয়া হয়নি। শুধুই ওমন কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বলেছেন, ‘আই অ্যাম শকটড।’ ওই ঘটনার পর পরই নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি। তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিকেটারদের মুখে তালা এঁটে দিয়েছে। সেই ঘটনার জের হিসেবে মঙ্গলবারও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেননি মুশফিক। তবে মুশফিক না বললে কথা বলেছেন ফারুক আহমেদ। করে গেছেন একাই ব্যাটিং। তবে এশিয়া কাপের আগে; পরবর্তীকালে টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপ এমন সময়ে এই অযাচিত ঘটনা দলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতেও পারে।
বিসিবির প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের যে জব ডেসক্রিপশন আছে; সেখানে কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলা নাই যে ঠিক কীভাবে দল করতে হবে। আসলে আমার কাজের সময় হয়েছে দেড় মাসের মত। আমি যে কয়টা দল বানিয়েছি; এটা আলোচনা করা যায়; কিন্তু মেন্ডেটরি নয়। একইভাবে ক্যাপ্টেন যখন একাদশ বানায়; তিনি যদি মনে করেন নির্দিষ্ট কোনো ব্যাপারে কথা বলা প্রয়োজন তা করেন। কিন্তু ওটাও মেন্ডেটারি না।’
তিনি যোগ করেছেন, ‘এমন না সে (অধিনায়ক) সিলেকশনের পার্ট। শেষ ৩ ওয়ানডেতে দল কিন্তু তারাই বানিয়েছেন। আর একদম যে আলোচনা করিনি; তা কিন্তু নয়। দল গঠনের আগে আমরা দীর্ঘক্ষণ কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ধরে নিয়েছিলাম কোচ যে কথা বলেছেন, তিনি কিন্তু ক্যাপ্টেনকে রিপ্রেজেন্ট করেই বলেছেন। এখানে কনফিউশনের কোনো ব্যাপার নেই। বললে ভালো। এটা একটা ভালো জিনিস এসেছে। যদি জব ডেসক্রিপশন বোর্ড থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় মতামত নেওয়া মাস্ট। ১৫ সদস্যের দল করার সময় কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে আর একাদশ করার সময় নির্বাচকদের সঙ্গে। তা করে দিলে ভালো হবে।’
দল নির্বাচনে অধিনায়ক খুব গুরুত্বপূর্ণ এটা স্বীকার করেই তিনি বলেছেন, ‘অধিনায়ককে চিন্তা করার মত যথেষ্ট স্বাধীনতা দিতে হবে। বোর্ড যদি ঠিক করে কনসালটেশন মাস্ট তখন আলোচনা হতে পারে। আগের দলগুলোতে আমরা করেছি কী ৫ জন মিলে আলোচনা করেছি। সবাই বসে যে সামান্য মতপার্থক্য আছে যুক্তির মাধ্যমে ঠিক করতে পারি; সব সময় তাই করেছি। এবার কেবল ওখানে অধিনায়ক ছিলেন মাঠে; আমরা কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি এমন একটা টিম দিলাম যা অধিনায়কের পরিকল্পনার সঙ্গে যাচ্ছে না বা দল সে বুঝতে পারছে না; এই জায়গায় কমিউনিকেশন খুব জরুরি। সে দলকে ভালোভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে ওর ওপর আমার আস্থা আছে।’
অধিনায়কের সঙ্গে কোনো গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে ফারুক আহমেদ বলেছেন, মুশফিককের শুরু থেকেই দেখেছি। ২০০২ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সদস্য ছিল। আমি সেই দলের ম্যানেজার হিসেবে দুবাই গিয়েছিলাম। মাজহার বলে একটা ছেলে ছিল সেই দলের অধিনায়ক। সে এখন মিডিয়ায় কাজ করে। ২০০৫ সালে মুশফিক গেছে অনূর্ধ্ব-১৭ প্লেয়ার হিসেবে। লর্ডসে ওকে টেস্ট খেলিয়েছি আমি। ওকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। ও খুব শক্ত মানসিকতার ছেলে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে। ওকে ২ বছরের দায়িত্ব দেওয়ার পর আমিই প্রথম বলেছিলাম ওকে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব দিলে পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। জেতার জন্য সব প্রসেস ঠিক থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও কিন্তু খুব খারাপ করেনি আমরা।’
জটিলতা নিরসনে প্রধান নির্বাচক আরও বলেছেন, ‘১৭ বছর আমি জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেছি। আমি জানি অধিনায়ককে কতটা চাপ নিতে হয়। তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার বুদ্ধিটা খারাপ নয়, ভালো বুদ্ধি। যা হয়েছে এটা মিস কমিউনিকেশন ছাড়া আর কিছু নয়। বিসিবি সভাপতিও বিষয়টি চমৎকারভাবে বলেছেন, তিনিও জব ডেসক্রিপশন জানেন; নির্বাচকরা ১৫ জনের দল বানাবে আর অধিনায়ক বানাবে একাদশ। যদি মতামত নেওয়ার ব্যাপার থাকে ২ দিক থেকে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়, এখানে কনফিউশনের কোনো ব্যাপার নেই। সেই চিন্তা থেকেই আমরা দল করেছিলাম। আমরা ধরে নিয়েছি ক্যাপ্টেনের কিছু মতামত কোচ জানতেন।’
মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি ভালো হল? এই প্রশ্নের জবাবে ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘ব্যাপারটি নিয়ে আমি সরাসরি কমেন্ট করতে পারব না। ২ জনই বোর্ডের অ্যামপ্লয়ী। কে কতটা বলতে পারব; এটা স্পষ্ট লেখা আছে। এই জিনিসটা করবে ক্রিকেট বোর্ড। কমেন্ট করার জন্য আমি সঠিক ব্যক্তি নই।’
ভুল বোঝাবুঝির কারণ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘লেকিংয়ের কিছু দেখি না। সবার গোল একটাই। অধিনায়কের বলা উচিৎ ছিল কিনা; এটা বোর্ড ঠিক করবে। দল ঘোষণার শেষ সময়ে কোচকে আমরা ডেকেছিলাম। তার আগে ফিজিও বিভবের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছি, কারণ প্লেয়ারদের ফিটনেস সমস্যা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার তামিম ইকবাল ইনজুরির জন্য বাইরে ছিল। আরেকজন সাসপেনশনের জন্য ২ ম্যাচ খেলতে পারবে না। টিম কম্বিনেশনের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা ২ বাঁহাতি স্পিনার রাখব কিনা। ৭ নাম্বারে চিন্তা করেছি একটা ব্যাটিং অলরাউন্ডার। মাহমুদউল্লাহর কাছে আমরা যা চেয়েছিলাম। তিনি বোলিং ভালো করলেও ব্যাটিংয়ে ভালো করেননি। তা আমরা ফিলাপ করেছি জিয়াকে দিয়ে। সব করেছি টিম কম্বিনেশনের কথা চিন্তা করে। কারণ এশিয়া কাপ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/সিজি/সা/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)