ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি : প্রায় সাত বছরের প্রতিশ্রুতি থেকে সরকারের সরে আসার ভূমিকায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় দুই জেলার সাধারণ জনগণ। ৯শ’ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে চালু হচ্ছে না ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন।

এ ব্যাপারে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন ও শুক্রবার সকাল থেকে ঠাকুরগাঁও থেকে সেতাবগঞ্জ এবং সেতাবগঞ্জ থেকে পঞ্চগড় ট্রেনমার্চ এবং প্রতিটি স্টেশনে বড় বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশগুলো থেকে শাটল ট্রেন চাই না, অবিলম্বে আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় থেকে চালু করার স্লোগান দেওয়া হয়। ফলে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে ফুঁসে উঠেছে দুই জেলার মানুষ। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন চালু না হওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সাধারণ মানুষ।

এরপর দীর্ঘদিনও আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন এই দুই জেলার মানুষ।

জানা গেছে, সরকার ৯শ’ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১০ সালের অক্টোবরে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে পঞ্চগড় পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটারের মিটার গেজ রেলপথকে আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও ডুয়েল গেজে রূপান্তর করার কাজ শুরু করে।

২০১৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারা ২ বার নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা ও ম্যাক্র কনস্ট্রাকশন।

এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৯০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৩টি বড় ব্রিজ পুনঃনির্মাণ ও মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁও, কাঞ্চন, বিরল, মঙ্গলপুর, সেতাবগঞ্জ, পীরগঞ্জ এবং ভোমরাদহ রেলষ্টেশন পুনঃনির্মাণ শেষ হয়েছে।

কিন্তু এই কাজ শেষ করতে প্রায় ৭ বছর লেগে যায়। শেষ হওয়ার পরেও এই রুটে ঢাকাগামী ব্রডগেজ লাইনের ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি।

ঠাকুরগাঁও ভোমরাদহ এলাকার চাকরিজীবী আবুল কালাম জানান, আমরা গত ৭ বছর ধরে আশায় বুক বেঁধে আছি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। সরকার প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেল লাইন নির্মাণ করলো কিন্তু এখন ট্রেন চালু করার ব্যাপারে কেন এই তালবাহানা ?

সদর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন অভিযোগের সুরে বলেন, ঠাকুরগাঁও বন্যামুক্ত কৃষিপ্রধান এলাকা। খরা ছাড়া সাধারণত আমাদের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় না। প্রচুর পরিমাণ ধান, গম, ভুট্টা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয় এ জেলায়। বাইরে থেকে পাইকার আসলে পরিবহন খরচের কারণে উৎপাদিত ফসলের নায্যমূল্য পাই না আমরা। মনে করেছিলাম ঢাকার সাথে সরাসরি ট্রেন চালু হলে আমাদের জেলার কৃষি পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম খরচে পাঠানো সম্ভব হত। কিন্তু কি কারণে সরকার এই অঞ্চলে ট্রেন চালু করছে না ?

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও রেল আন্দোলনের অন্যতম নেতা ওবায়দুল্লাহ মাসুদ জানান, গণমানুষের দাবী উপেক্ষা করে ট্রেন চালু হলে লোকসান গুনতে হবে এমন অজুহাতের কথা উঠিয়ে ট্রেন চালু করছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে অবহেলিত ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষের প্রতিশ্রুত দাবীর বাস্তবায়ন ঘটান। নাহলে দীর্ঘদিনের অনুন্নয়নের ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রেজওয়ানুল হক রিজু বলেন , আমরা আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়া অন্য কিছু মানবো না। অবহেলিত এ জনপদের প্রত্যেকটি ন্যায্য দাবী আদায় করা হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, জেলার মানুষের কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারো আবেদন করা হবে।

উল্লেখ্য, ১৭ জুন শনিবার সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু না করে পঞ্চগড় থেকে শাটল ট্রেন উদ্বোধন করতে আসছেন রেলমন্ত্রী। এই খবরে বিক্ষুব্ধ পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছেন। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এনআই/জুন ১৬, ২০১৭)