নতুন আসর; নতুন প্রত্যাশা
আরিফ সোহেল, দ্য রিপোর্ট : দিনের আলোর স্নিগ্ধতা; রাতের মারকারি ঔজ্জ্বল্য- এই দুই আলোকে ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের। তা কি পারবে; প্রশ্নটা বড় হচ্ছিল প্রতিপক্ষ ভারত বলে। ফতুল্লা আধুনিক স্টেডিয়াম; তা ভাবার অবকাশ নেই। কিন্তু সেখানে ভাষামাসে উড়তে পারে লাল-সবুজের পতাকা। নতুন আসর বলেই ছায়ার আড়ালে পড়ে যাচ্ছে পেছনের অনেক কিছুই। জেগে উঠতে পারে নতুন বাংলাদেশ। সেখানে দল নির্বাচন নিয়ে অনভিপ্রেত ঘটনাও চাপা পড়তে পারে জয়ের রূপালি আলোর মুগ্ধতায়। এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার বাংলাদেশ নামছে; প্রতিপক্ষ ভারত। রেকর্ড ভারতের পক্ষ নিলেও শেষ আসরের জয়ের তরতাজা স্মৃতিবদ্ধ বাংলাদেশ। আর যথারীতি ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ২টায়। পাশে থাকছে নির্ধারিত স্যাটেলাইটও। যার মাধ্যমে ম্যাচটি ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে।
বিদেশের মাটিতে ভারত অনেকটা লেজকাটা বাঘ। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে যে বেহাল অবস্থা দেখা গেছে; তাতে ভারত অনেকটা খোলসে আকটে গেছে। বাংলাদেশ যদি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে; তাতেই কাফি। কারণ বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইওয়াশের গল্প এখনও তাজা; ঝলমল করছে। নিউজিল্যান্ড বিপর্যয়ের খোরেখাতা খুলে হিসাব-নিকাশের কথা এখনও টানাটানি চলছে। অনুশীলন শেষে মিডিয়ার কাছে তাই জবাব দিতে হয়েছে ভারত ‘ভাষ্যকার’ দিনেশ কার্তিকের। যদিও গত ৮ ম্যাচে ভারত ভালো করতে পারেনি। কেন এমন হয়েছ সেই উত্তর জানা নেই দিনেশের। বলেছেন, ‘আমি ওই ৮ ওয়ানডে ম্যাচের বাইরে ছিলাম। তাই এই মুহূর্তে সে ব্যাপারে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই। তবে আমি জানি আমাকে একেবারে নতুনভাবেই শুরু করতে হবে। দলভূক্ত হয়ে আমি উদ্বীপ্ত। আমার মনে হয় আমার মতো অনেকেরও তা-ই। আর শেষ ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন; যারা খেলেছেন।’
অবশ্য এশিয়া কাপের রেকর্ডবুকে বাংলাদেশের অবস্থা বেজায় নাজুক। ৯ ম্যাচের ১টিতে মাত্র জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেখানেও জয় খুঁজে পাওয়া কঠিনতমই। তবে আশাবাদী বাংলাদেশ। মঙ্গলবার অনুশীলন শেষে বাংলাদেশের ঝাণ্ডা হাতে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, আগে চাই ধারাবিাহিকতায় ফিরতে। ওয়ানডেতে যে কোনো দলের বিপক্ষেই আমরা জেতার ক্ষমতা রাখি। আমরা শতভাগ চেষ্টা করব জয়ের জন্য।
তবে সত্য স্বীকার করে তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল। আমার মনে হয় তারা যে কোনো দলকে হারাতে সক্ষম। আমরা কালকে (বুধবার) আমাদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব। আমাদের সব পরিকল্পনা কালকের ম্যাচ নিয়ে।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে দারুণ সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের আগে শেষ সিরিজে তালগোল পাকিয়ে ফেলেই কিছুটা বিপত্তি। অথচ প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে বাজেভাবে হারার পর দুরন্ত বাংলাদেশকেই খুঁজে পেয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে শুরু করে টোয়েন্টি-২০ সিরিজ, প্রথম ওয়ানডেতে অন্য বাংলাদেশকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু ঠিক তীরে এসে তরী ডুবেছে। অবশ্য শেষ ২ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে বাংলাদেশও খুব ভালো অবস্থানে থেকে এশিয়া কাপ শুরু করার সুযোগ পাচ্ছে না। তবে এশিয়ার কাপের সর্বশেষ আসরের সুখস্মৃতি আলোর বাতি ঘরে হয়ে রয়েছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশকে বুধবার ফতুল্লার ২২ গড়ের সবুজাভ আঙিনায় নামতে হচ্ছে সাকিব-তামিমকে ছাড়াই। এখানেও একটু বিপদ থাকছে স্বাগতিকদের জন্য। তবে নিউজিল্যান্ড বিপক্ষেও সাকিব-তামিমরা ছিলেন না। সেখানেও কিন্তু তাদের বিপক্ষে ধারাবাহিক জয় তুলে নিতে কষ্ট হয়নি। অবশ্য গত আসরে তামিম ইকবাল দারুণ ফর্মে ছিলেন। ৪ ম্যাচে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল তার। বাংলাদেশ ফাইনাল অবদি খেলেছে নির্বিঘ্নে। এমন কী সেখানে ভারত-শ্রীলঙ্কাকে নস্যি মনে করেছে বাংলাদেশ। ভারতের ওই দলে শচিন টেন্ডুলকারও খেলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে হেরে গেছে। ফাইনালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে জিততে ২ রানের ব্যবধানে হেরেছে। অবিশ্বাস্য পুঁজির ওপরই বাংলাদেশ চলতি আসরে নামছে।
দেখতে দেখতে এশিয়া কাপের ৩০ বছর কেটে গেছে। তবে চলতি আসর আয়োজন নিয়েও পানি ঘোলা কম হয়নি। ধান্ধাবাজ বেনিয়ারা বাংলাদেশ থেকে কৌশলে এশিয়া কাপ ভাগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের দেশ; বাংলাদেশ তা শক্তহাতেই প্রতিহত করেছে। ঘটনাক্রমে বাংলাদেশের নির্বাচনোত্তর জনপদে তখন রক্তের হোলিখেলা; বাসা-বাড়ি-বাসে-রেলে তখন আগুনের লেলিহান শিখা; বাতাসে বারুদের গন্ধ; সারাদেশে ধ্বংসের মাতম। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আকাশে তখন ‘রাজনৈতিক’ মহাসঙ্কটের কালোমেঘ। সেই অমানিশার অন্ধকারে বাতি জ্বালিয়ে সব রাজনৈতিক মিলেই। নিশ্চয়তা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চলাকালে জ্বালাও-পোড়াও-অবরোধ-হরতাল থাকবে না। থাকবে শতভাগ নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা।
১১ দিনের আসরে ১১ ম্যাচ; কোনো দল ৫টি ম্যাচ জিতলেই শিরোপা পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ। ২০১২ সালে সর্বশেষ এশিয়া কাপের আসর বাংলাদেশেই বসেছিল। এটা এশিয়া কাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসর। সমীকরণে শক্তিমত্তায় ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও তারা নির্ভার থাকছে না। যদিও এশিয়া কাপে ভারত সর্বোচ্চ ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আসরের অন্যতম ফেভারিটও তারা। তারপরও ঘটনার সঙ্গে অঘটনের যোগসূত্র যোগ হলে অনেক কিছুই নিয়মের মধ্যে থাকে না।
(দ্য রিপোর্ট/এএস/ওআইসি/এএল/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)