চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ২০১৬-মার্চ ২০১৭) ব্যবসায় বস্ত্র খাতে রিজেন্ট টেক্সটাইলের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় এবং পরিচালন মুনাফা কমেছে। এরপরও এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির করপরবর্তী বা নিট মুনাফা বেড়েছে। ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষে শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা এফডিআর করে রাখার কারণেই মূলত প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে।

দেখা গেছে, কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করলেও তা ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবহার করতে পারেনি। বরং কোম্পানির ১৬ শতাংশ টার্নওভার কমেছে এবং অপারেটিং মুনাফা কমেছে ১৮ শতাংশ। এরপরও প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা বেড়েছে ২৮ শতাংশ।

রিজেন্ট টেক্সটাইল চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ১৬-মার্চ ১৭) ব্যবসায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করেছে ৮৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। এ সময় অপারেটিং মুনাফা হয়েছে ১২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কিন্তু আগের অর্থবছরের একইসময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় হয়েছিল ৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার এবং অপারেটিং মুনাফা ছিল ১৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির চলতি অর্থবছরে বিক্রয় কমেছে ১৬ শতাংশ এবং অপারেটিং মুনাফা কমেছে ১৮ শতাংশ।

এদিকে, কোম্পানির বিক্রয় ও অপারেটিং মুনাফা কমলেও নিট মুনাফা বেড়েছে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ২৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরে মুনাফা হয়েছে ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ০.৮৩ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ইপিএস ০.৬৮ টাকা।

কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে আইপিও’র টাকা এফডিআর বাবদ অর্জিত সুদ। প্রতিষ্ঠানটি চলতি অর্থবছরে সুদবাবদ ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা আয় করেছে। আগের বছরের একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির সুদবাবদ আয় বেড়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বা ১৯৫ শতাংশ। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির সুদবাবদ আয় না বাড়লে, নিট মুনাফা ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা কমে হতো ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

রিজেন্ট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে গরমিল তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত পৃথক পৃথক দুই প্রান্তিকের আর্থিক হিসাবের সঙ্গে মিলছে না ৬ মাসের মোট হিসাবের। ১ম প্রান্তিকে ইপিএস ০.২৮ টাকা ও ২য় প্রান্তিকে ইপিএস ০.২৫ টাকা দেখিয়েছে। যাতে ২ প্রান্তিকের বা ৬ মাসের মোট ইপিএস হয় ০.৫৩ টাকা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মোট হিসাবে ০.৫১ টাকা ইপিএস দেখিয়েছে। এ ছাড়া ৩য় প্রান্তিকে বিক্রয় ও মুনাফার পরিমাণ দেখায়নি। যাতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ এসব হিসাবকে ভুল হিসেবে লাল চিহ্নিত করে রেখেছেন।

কোম্পানিটিতে বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে প্রতিটি শেয়ারে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকা করে বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে ৩ প্রান্তিকে ৮৩ টাকা হিসাবে বছরে বিনিয়োগ ফেরত বা রিটার্ন আসবে ১.১১ টাকা। যা শতকরা হিসাবে মাত্র ৪.৪৩ শতাংশ। এ হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে এফডিআর করলে আরও বেশি পাওয়া যেত ঝুঁকি ছাড়াই।

৯ মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ০.০৪ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটি এই সময়ের ব্যবসায় নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।

এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে কোম্পানির অ্যাকাউন্টস বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘সবসময় বিক্রয় সমান হবে এমন না। ক্রেতাদের চাহিদা কম থাকায়, এ বছরের ৯ মাসে বিক্রয় কম হয়েছে। এটা নরমাল বিষয়। আর আইপিওর টাকা এফডিআর করায় সুদজনিত আয়ের কারণে এ সময় মুনাফা বেড়েছে।’

চলতি বছরের ৩১ মার্চ রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৯.৮৬ টাকা।

উল্লেখ্য, রবিবার (জুন ১৮) লেনদেন শেষে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৭.৯০ টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/জুন ১৯, ২০১৭)