দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের সংগীত, নাটক, নৃত্য, কৃত্য ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণায় উল্লেখযোগ্য নাম সাইমন জাকারিয়া। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।

এ ছাড়া নিয়মিত লিখছেন নাটক, কবিতা ও উপন্যাস। বাংলা একাডেমিতে কাজের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’র ভিজিটিং স্কলার। এ ছাড়া আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদান করেছেন। দেশের বাইরেও পড়ানো হয় তার নাটক। জিতেছেন উল্লেখযোগ্য পুরস্কার। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : নাটক- শুরু করি ভূমির নামে, কবি, ও নাটকসংগ্রহ-১, কবিতা- সদানন্দের সংসারে, আনন্দময়ীর আগমনে, উপন্যাস কে তাহারে চিনতে পারে, গবেষণা- প্রণমহি বঙ্গমাতা (৪ খণ্ড), প্রাচীন বাংলার বুদ্ধ নাটক ও বাংলাদেশের লোকনাটক : বিষয় ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্য। আরও লিখেছেন- বাংলা সাহিত্যের অলিখিত ইতিহাস (যৌথ), ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ আত্তীকরণ ও পরিবেশন-পদ্ধতি (যৌথ)।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার রচিত ও সম্পাদিত ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। বই প্রকাশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত এই সময়সীমার মধ্যে এত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গত কারণ আছে। আসলে, বিগত দুই বছর দ্য ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর ভিজিটিং স্কলার হিসেবে ব্যস্ত ছিলাম এবং গত বছর ঠিক এই সময়টাতে সুদূর আমেরিকায় অবস্থান করি। তাই আমার তেমন কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। এবার বাংলা একাডেমিতে আমার কর্মজীবনের মধ্যে এক ধরনের একাগ্রতা সৃষ্টি হয়েছে, তাই একসঙ্গে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশের সুযোগ এলো।’

প্রকাশিত বইগুলো হলো- ‘নাটকসংগ্রহ-২’ (অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস), ‘উত্তরলালনচরিত’ (সদর প্রকাশনী), ‘বাংলাদেশের লোকসংগীত’ (ইছামতি প্রকাশনী), ‘নাট্যচিন্তা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ (ভূমিকা সঙ্কলন গ্রন্থনা ও সম্পাদনা, অ্যাডর্ন পাবলিকেশনস), নাজমীন মর্তুজার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র’ (বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়), ‘বিনোদিনী’ (ভাষাচিত্র) এবং ‘বোধিদ্রুম’ (নয়া উদ্যোগ, কলিকাতা)।

নিচে প্রকাশিত কিছু বইয়ের ফ্ল্যাপ ও ব্যাক কাভার থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে দেওয়া হলো-

‘নাটকসংগ্রহ-২’ এর শেষ প্রচ্ছদে নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান লিখেছেন, ‘সাইমনের নাটকে এক ধরনের ফিউশন ওয়ার্ক লক্ষ্য করা যায়। পুরান, গল্পকথার সঙ্গে লোকজীবন ও আধুনিক জীবন মিলে মিশে উঠে আসে তার নাটকে। আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ নাট্যকার খুব বেশি নেই, হাতে গোনা কয়েকজন নাট্যকার রয়েছেন, নাটকেরও খুব অভাব। সাইমন জাকারিয়া আমাদের নাটকের অভাবের দিনে, নাটকের দুর্ভিক্ষের দিনে, একটির পর একটি মৌলিক নাটক রচনা করে চলেছেন। আসলে, আজকের বাংলাদেশে নাটক রচনার ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল-মামুন, মমতাজউদ্দীন আহমদ, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদের সঙ্গে আরেকটি নাম যুক্ত হলো- পূর্ণাঙ্গ নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া।’

‘উত্তরলালনচরিত’ এর ব্যাক-কাভার থেকে- দীর্ঘদিনের সাধুসঙ্গের অভিজ্ঞতা আর দেশবিদেশে লালন গবেষণার ধারা-উপধারা পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে এক দোলপূর্ণিমার মায়ায় সাইমন জাকারিয়ার চেতনাবাহিত হয়ে উৎপত্তি লাভ করেছে এই নাট্যগ্রন্থ উত্তরলালনচরিত। এই গ্রন্থে সাইমন লালনজীবনের গূঢ়-রহস্যকে নিজস্ব চেতনার অন্তর্গত প্রজ্ঞা ও যুক্তি নিরিখে উপস্থাপন করেছেন। সাইমনের লালন এখানে অসাধারণ বাকপ্রতিভায় উচ্চারণ করেছেন সেই নিবিড়তম সত্য- ‘আমি আধ্যাত্ম-সংসারে সংসারী, এই সংসারে সাধনাই আমার পত্নী- আর জ্ঞান আমার পুত্র আর ভক্তি আমার কন্যা।’ এ ধরনের আরও বহু নিবিড় সত্য প্রকাশিত হয়েছে এই গ্রন্থে।

‘বাংলাদেশের লোকসংগীত’ বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে বইয়ের বিন্যাস তুলে দেওয়া হলো- ‘গ্রন্থটি তিন পর্বে বিভক্ত, প্রথম পর্বে ঐতিহ্যিক ইতিহাস নির্ভর তথ্যের আলোকে ক্ষেত্র সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় বিধান করে বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি সংগীত ধারার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উপস্থাপন করছে, দ্বিতীয় পর্বে বর্তমান বাংলাদেশে চর্চিত লোকসংগীতের অবস্থান ও এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ক্ষেত্রানুসন্ধানী বিশ্লেষণও প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তৃতীয় পর্বে বাংলাদেশের লোকসংগীত চর্চাকারীদের মধ্যে নির্বাচিত কয়েকজন ভাবুক, সাধক, পেশাজীবী ও ভাসমান গায়কদের সাক্ষাৎকার সংকলিত হয়েছে।’

‘নাট্যচিন্তা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ সঙ্কলনের প্রথম ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশের নাট্যকার ও গবেষক এই গ্রন্থের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের রচনা থেকেই রবীন্দ্রনাথের নাট্যচিন্তার ক্রমবিকাশ, বিবর্তন বর্তমান ও ভবিষ্যৎকালের নাট্যকর্মী, নাট্য রচয়িতা, গবেষকদের জন্য সংকলন-গ্রন্থন ও সম্পাদন করেছেন। এই গ্রন্থ পাঠে পাঠক খুব সহজে বাংলা নাটক সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন উপলব্ধি করতে পারবেন বলেই আমাদের ধারণা।’

‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র’ বইটির বিষয় বিন্যাস সম্পর্কে বলা হচ্ছে- ‘নাজমীন মর্তুজা ও সাইমন জাকারিয়ার যৌথভাবে রচিত এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস, দ্বিতীয় অধ্যায়ে সাধক-কবিদের সাধনা ও সৃজনশীলতায় বাদ্যযন্ত্র, তৃতীয় অধ্যায়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের শ্রেণী বিন্যাস ও তালিকা, চতুর্থ অধ্যায়ে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সচিত্র পরিচিতি এবং পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিসত্তা তথা বাঙালি ভিন্ন এ দেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তা তথা নৃগোষ্ঠীর ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের তালিকা, পরিচিতি, ব্যবহার বিধি ও চিত্র সংযোজন করা হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এসবি/এএল/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪)