মো: ফাইয়াজ ইকবাল
ঈদের দিনটা অসহায়দের জন্য উৎসর্গ করলাম
২০১৭ সালের ঈদুল ফিতর ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঈদ। শুধু আমারই নয় আমার সাথে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিল তাদের সবার জন্যই এই ঈদ ছিল অন্যরকম।
গত ১৩জুন (২০১৭) অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধস হয়। এতে রাঙামাটির অনেক পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় ১২০ জন মানুষ এই পাহাড় ধসের কারণে প্রাণ হারায় এ জেলায়। অন্যদিকে অনেক পাহাড়ি-বাঙালি তাদের ঘর হারায়। ঝুঁকিপূর্ণ ও ধসে যাওয়া ঘর ছেড়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। এমনই একটি আশ্রয়কেন্দ্র রাঙামাটি টেলিভিশন সেন্টারে প্রায় ২৩১ জন মানুষ আশ্রয় নেয়। যার মধ্যে ২০৩ জন বাঙালি ও ২৮ জন পাহাড়ি।
রাঙামাটির বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তাদের দেখাশুনা করার মত এত জনবল না থাকাতে স্বেচ্ছাসেবকদের দরকার হয়। তাই প্রত্যেক আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক স্বেচ্ছাসেবক যোগদান করে। তাদের অনুপ্রেরণায় আমি আর আমার ছোট ভাই রাঙামাটি টেলিভিশন আশ্রয় সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করি। রোজার দিনগুলোতে আমরা সবাই মিলে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করেছি। যেহেতু এতদিন ধরে কাজ করেছি তাই ঈদের দিনও দুর্গত মানুষগুলো থেকে দূরে থাকতে পারলাম না। আমাদের মত স্কুল কলেজের ছেলেরা স্বভাবতই তাদের বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাসি আনন্দে ঈদ কাটাতে চায়। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রের অসহায় মানুষদের ছেড়ে ঈদ করতে একদমই ভালো লাগছিল না। তাই আমার ঈদের দিনটা আমি তাদের জন্য উৎসর্গ করে দিলাম। এই ঈদ আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের ঈদ ছিল। এই আশ্রয়হীন মানুষের সাথে ঈদ উদযাপন করে মনে এক অন্যরকম শান্তি পেয়েছিলাম। তাদেরকে সাহায্য করে, তাদেরকে খাবার বিতরণ করে, তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে মনে হচ্ছিল যুদ্ধ জয় করে ফেলেছি। ভালো লাগছে জীবনের প্রথমবার অল্প সময়ের জন্য হলেও কিছু অসহায় মানুষের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটাতে পেরে। জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে?
আমি জানি না আমার সব বন্ধুরা কে কিভাবে ঈদ কাটিয়েছে। তবে তারা নিশ্চয় ভবিষ্যতে অসহায় দুঃস্থ মানুষের সাথে খুশির দিনগুলো ভাগাভাগি করার সুযোগ মিস করবে না।
লেখক : দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী-ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম