দুলাল সরকারের প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা ১১। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হলো তার প্রথম উপন্যাস। এ ছাড়া গল্প লিখেছেন নিয়মিত। শিক্ষকতা করছেন মাদারীপুর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন ওয়াহিদ সুজন

মেলায় কী কী বই এসেছে।

নান্দনিক থেকে আমার প্রথম উপন্যাস এসেছে। নাম ‘ও ধরিত্রী ও মানুষ’। কবি প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে কবিতার বই ‘তীরবিদ্ধ অন্ধকার’।

দীর্ঘদিন ধরে কবিতা ও গল্প লিখছেন। উপন্যাসে আসা কেন।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও মাস্টার্স করেছি। পরে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে পড়ি। দেশে ফেরার পর নটরডেমে পড়াতাম। পরে প্রত্যন্ত গ্রামের ডিগ্রি কলেজে পড়াতে চলে যাই। সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকদিন বলেছে, স্যার আপনি গল্প ও কবিতা লিখেন। এবার একটা উপন্যাস লিখছেন না কেন। তাদের ভাবনাটি ভালো লেগেছে।

আমার বাড়ির চারপাশে মাঠ আর চর। সেখানে সারাবছর চাষ হয়। এ সসব দেখে দেখে আমার অনুভূতি কাজ করল, এদের নিয়ে কিছু লেখা যায়। এরপর আমি তথ্য যোগাড় শুরু করলাম। জানলাম এক সময় এ এলাকা জলমগ্ন ছিল। ফরিদপুর-মাদারীপুর অঞ্চলটা। ধীরে ধীরে এখানে বসতি স্থাপিত হয়। এখানে বাস করা হিন্দু সম্প্রাদয়ের নিম্নবর্ণের অন্ত্যজদের ঘাত-প্রতিঘাত আমার দেখা। উচ্চ বর্ণবাদের বলি ওরা। আমার উপন্যাসে তা বলেছি। বিশেষ করে আমার উপন্যাসের চরিত্র গুনাই, সে কিনা কামলা খাটে কিন্তু স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। মূলত তার জীবনবোধ ও দীর্ঘদিনের বঞ্চিতের উপাখ্যান হলো এ উপন্যাস।

এটি কোন সময়ের প্রেক্ষিতে লেখা…

এটা তো সেই জলমগ্ন সময় থেকে। তবে এই আধুনিক সময়ে এসে ঠেকেছে।

আপনি যে ধরনের জীবনযাপন করছেন, তা না করে অন্যদের গল্প তুলে আনলেন কেন? আধুনিক মানুষ হিসেবে আপনার নিজের জীবনেও তো অনেক গল্প আছে।

আমি মানুষের সমতায় বিশ্বাসী। আমি দেখি যাদের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি, তারা অর্থের অভাবে বদলা-কামলা দেয়। লেখাপড়া করতে পারে না। এই অনুভূতি আমার মধ্যে তীব্রভাবে কাজ করে। যারা সাধারণ মানুষ তাদের এই স্বপ্নটা রয়েছে। তারা উন্নত জীবন চায়। এই ভাবনাগুলো থেকে, সাম্যবাদী চিন্তা থেকে লিখেছি। আমি প্রভাবিত হয়েছি ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসে। সেখানে যেমন পাভেল শ্রমিকদের সংগঠিত করেছে। এখানে গুনাই মাঠে কাজ করা লোকদের সংগঠিত করে।

এখন কী লিখছেন বা লিখতে চান।

শান্তিনিকেতনের ফুল-বৃক্ষ ও অতীত ইতিহাস নিয়ে কাজ করছি। রবীন্দ্রকাব্যে ফুল ও বৃক্ষ, অনেকটা উপন্যাসের মতো। মূলত কবিতা-ই লিখি। তবে এই উপন্যাসের পর ভাবছি আরও উপন্যাস লিখব। খেটে লিখব।

প্রথম উপন্যাস প্রকাশের অভিজ্ঞতা কেমন।

ভালো। বিশেষ করে নান্দনিকের মতো প্রকাশক বের করেছে। আমি খুব শিহরিত। চলছেও ভালো।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৪)