দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে পশু কোরবানির জন্য ২ হাজার ৯২৭টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব স্থানে ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬০টি পশু কোরবানি হতে পারে। এছাড়া এবার সিটি করপোরেশনগুলোতে গরুর হাটের সংখ্যা হবে ৯৬টি।

ঈদুল আজহার সময় নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি এবং দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনগুলোর কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার (১৯ জুলাই) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা হয়।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে আগামী ১ সেপ্টেম্বর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে পারে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘এবার আমরা এ বিষয়টি (নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি) ইউনিয়ন পর্যায়েও হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করব। বিষয়টি আমরা সচেতনতার সাথে দেখছি। আমাদের প্রস্তুতি ব্যাপক। কোন কোরবানি রাস্তায় করা যাবে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আইনকানুনের ভয় না দেখানোই মনে হয় ভাল হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী ২০১৪ সালে কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে জবেহ করার প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে কোরবানির পশু জবেহ’র জন্য ১১টি সিটি করপোরেশন ও ৫৪টি জেলা সদর পৌরসভায় মোট ৬ হাজার ২৫১টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই বছর নির্ধারিত এলাকার আওতায় পশু কোরবানির সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৩২টি। এবং এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি কার্যক্রম ৭০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।’

এবার শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, উত্তরে ২ লাখ ২১ হাজার পশু কুরবানি হতে পারে। উত্তর সিটি করপোরেশনে পশুর হাট বসবে ১০টি। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ৩০ কেজি ওজনের ৩ লাখ ৫০ হাজার পলিব্যাগ সরবরাহ করা হবে। পশু কোরবানির নির্ধারিত স্থান ৫৪৯টি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর শফিকুর রহমান জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২ লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। পশু কোরবানির জন্য ৫৫৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া দক্ষিণে ১৩টি পশুর হাট বসবে। বর্জ্য বহনে ২ লাখ চটের ব্যাগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২১৭, খুলনায় ১৬৮, বরিশালে ১৩৯, সিলেটে ২৭, নারায়ণগঞ্জে ১৮৩, কুমিল্লায় ১৯০, রংপুরে ৯৯ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৪৩৫টি পশু কোরবানির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক ইসমাত মাহমুদা বলেন, ‘কোরবানির জন্য স্থান নির্ধারণ করে দিলেই হবে না। সেগুলো উপযোগী রাখতে হবে। পৌরসভার মেয়ররা এ সংক্রান্ত কাজের জন্য অর্থ সংকটের কথা বলেছেন।’

এক্ষেত্রে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সমন্বিতভাবে কাজ করার উপরও জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে মাহমুদা বলেন, ‘বাড়ি থেকে কিছুদূরে নির্ধারিত স্থানে অনেকে গোশত বহন করতে চান না। আমরা পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারি না। তাই আমরা বলেছি বাড়ির আঙিনায় কোরবানি দিতে পারলে দেবেন। শুধু আমরা বলছি রাস্তায় কোরবানি করবেন না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানে এসে লোকজন তেমন কোরবানির কাজগুলো করে না। যার যার জায়গায়ই করেছে। কোরবানির জন্য নির্ধারিত অনেক জায়গা খালি ছিল, কিছু কিছু জায়গায় হয়েছে। গত বছর আমরা সেভাবে সাড়া পাইনি। ক্রমান্বয়ে এটা বাড়বে।’

গত বছর কোরবানির সময় পানির মধ্যে পশু জবাই করার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিদেশেও বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও জানান সাঈদ খোকন।

উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার আমরা আরেকটু পরিপক্ক হয়েছি। আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করছি। এরমধ্যে ১ সেপ্টেম্বর (কোরবানির দিন) যদি বৃষ্টি হয় তবে এর একটা প্রভাব থাকবে। প্রকৃতি অনুকূল হলে আশা করি মানুষের ভোগান্তি হবে না।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘চট্টগ্রামে পশু কোরবানির জন্য ৩৬৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা রাত ৯টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এছাড়া নির্ধারিত স্থানে যাতে কোরবানি হয় সেজন্য মোবাইল কোর্ট রাখাও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

প্রতি জেলায় একটি করে জবাই খানা করার প্রস্তাব দেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/জুলাই ১৯, ২০১৭)